
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
শোকের মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাঙালির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। তাঁর দু'কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।সভ্যতার ইতিহাসে এটি একটি জঘন্য, নির্মম ও কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড বলে বিবেচিত। মহান এই নেতার সঙ্গে চট্টগ্রামের সম্পর্ক ছিল নিবিড়। লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হকের গবেষণায় এ বিষয়ে বিস্তৃত জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মহানগর নিউজের পাঠকদের জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে 'স্মৃতিরেখায় চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু' শীর্ষক গবেষণামূলক প্রবন্ধটি প্রকাশিত হবে।
মুহাম্মদ শামসুল হক «
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পটিয়ার বেশ কয়েকজন নেতা কর্মীর পরিচয় ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। এদের মধ্যে ছিলেন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী (প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী), মিয়া আবু মোহাম্মদ ফারুকী, এ কে এম আবদুল মান্নান, হামিদুর রহমান, আহমদ নূর সওদাগর, আবদুল খালেক ওরফে চাচা খালেক, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট বদিউল আলম প্রমুখ। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী পরিচয় ও সম্পর্ক চল্লিশের দশক থেকে। কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে অন্য জেলায় গিয়েও বক্তব্য দিতেন। এক সময় দলের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথমে শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও পরে প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী এমপি নিযুক্ত হন। তাঁর নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে পটিয়া এসেছিলেন। পটিয়ার মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন আহমদ, কাজী আবু তৈয়ব, আ ক ম শামসুজ্জামান ও চৌধুরী মাহবুবুর রহমান জানান, সত্তরের নির্বাচনে পটিয়া থেকে (পটিয়া-চন্দনাইশ) আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ভাষণ দেন। সেদিন দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল তাদের প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখা ও তাঁর ভাষণ শোনার জন্য। মাঠ পূর্ণ হয়ে মাঠের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত পটিয়া কলেজের টিনের চালায় ঠাঁই নিয়েছিল অনেক উৎসুক মানুষ।
ভাষণের এক পর্যায়ে মানুষের ভারে ধ্বসে পড়েছিল কলেজের সেই টিনের চাল। তখন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন নোয়াখালীর ওবায়দুল্লাহ মজুমদার। সেসময় মঞ্চে উপস্থিত স্থানীয় ছাত্রনেতারা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুললে বঙ্গবন্ধু আগুন নিয়ে খেলা না করার জন্য হুঁশিয়ার করে দেন। জনসভায় যাওয়া-আসার সময় ছাত্র-জনতা বিপুলভাবে সংবর্ধিত করেন প্রিয় নেতাকে। প্রসঙ্গত, অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ মজুমদার সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এক পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে দালালে পরিণত হয়েছিলেন।
১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই সফরের অংশ হিসেবে তিনি সড়কপথে কালুরঘাট হয়ে পটিয়া যান এবং পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরীর বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেন। সভায় গোন্দিারখিল গ্রামে বসবাসকারী এক অন্ধ ব্যক্তি ভিক্ষুক মঞ্চে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফুলের মালা পরানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। স্থানীয় নেতাদেব কাছে জানতে পেরে বঙ্গবন্ধু তাতে সম্মতি দেন। মালা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ওই ব্যক্তিকে দুশ টাকা বখশিশ দেন। প্রসঙ্গত, এ লেখক তখন কিশোর ছাত্র। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালের দুটি জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। অধ্যাপক নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ থেকে ছুটে গিয়ে জাসদে যোগ দেওয়া অ্যাডভোকেট বদিউল আলম। ৭৫ পরবর্তী সময়ে তিনি মেজর এম এ জলিলের ইসলামী মুক্তি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন।
কাজী আবু তৈয়ব আ.ক.ম শামসুজ্জামান জানান, স্বাধীনতার আগে একবার কক্সবাজার থেকে আসার সময় পটিয়া আদালত এলাকায় বরদা বাবুর বাজার-সংলগ্ন তৎকালীন পটিয়া থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আহমদ নূর সওদাগরের কাপড়ের দোকান ‘মদীনা ক্লথ স্টোরে’ কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিযেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এসময় অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরী, ছাত্রনেতা শামসুদ্দিন আহমদসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতির নানান দিক সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন এবং তাঁর গাড়িতে থাকা তরমুজ বের করে সবাইকে খাওয়ান।
স্বাধীনতা পরবর্তী চট্টগ্রামে প্রথমবার:
১৯৭১ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তাল। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মর্ম অনুযায়ী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলন সফল করার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকার সঙ্গে কাজ করেন বঙ্গবন্ধুর চট্টগ্রামের অনুসারীরা। যদিও ছয় দফা তথা এক দফা আন্দোলনের প্রধান সহযোগী এম এ আজিজ অকালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার এবং এর আগে তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামের নেতারা সাধারণ কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন।
৯ মাস লড়াইয়ের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্র“মুক্ত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির জনক হয়ে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথমে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপতি। পরে হন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি-প্রটোকল অনুযায়ী আগের মতো মুজিব ভাই বা বঙ্গবন্ধু হিসেবে যখন-তখন সবখানে ছুটে যাওয়া তাঁর পক্ষে আর সম্ভব ছিল না।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের কঠিন দায়িত্ব বর্তায় তাঁর ওপর। এর মধ্যেও অর্থাৎ ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালে অন্তত ছয় বার তিনি চট্টগ্রাম এসেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা-প্রটোকল সত্ত্বেও অতীতের সহকর্মী নেতা-কর্মীদের ভোলেননি। যখনই এসেছেন তাঁদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন, স্নেহের সুরে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। তখন দেশে জেলা ছিল ১৯টি। স্বাধীন দেশের মন্ত্রীসভায় চট্টগ্রামের দুই নেতাকে পূর্ণ মন্ত্রী ও একজনকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্থান দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন জহুর আহমদ চৌধুরী ও এম আর সিদ্দিকী এবং প্রতিমন্ত্রী ছিলেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী।
স্বাধীনতার আগের এবং পরের প্রেক্ষাপট ছিল প্রায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাধীনতার আগে ছিল একটি উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার তাগিদ। বঙ্গবন্ধুর সব বক্তব্য ছিল সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আবিস্কার করলেন সম্পূর্ণ নতুন এক বাংলাদেশ। দেশ নয় যেন পাকিস্তানিদের হাতে অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, প্রশাসনিকসহ সব দিক থেকে বিধ্বস্ত এক জনপদ। তাই স্বাধীনতার পর বিভিন্ন এলাকায় তাঁর সফরের প্রধান লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সব দিক থেকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করা তথা দেশ গড়া।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম চট্টগ্রাম আসেন ১৯৭২ সালের ২৯ মার্চ। পর দিন (৩০ মার্চ) সকালে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বুদ্ধিজীবী মহলের সঙ্গে এক সভায় মিলিত হন। সভায় উপস্থিত কবি ওহীদুল আলম জানাচ্ছেন, ‘সকাল (৩০/৩/৭২) সার্কিট হাউজে সরকারী দাওয়াৎ। ডিসি চিঠি পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বুদ্ধিজীবীদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। গতকাল (২৯/৩/৭২) তিনি হেলিকপ্টারে নেমেছেন সার্কিট হাউজের সামনের ময়দানে। স্বাধীনতার পরে এই পয়লা তাঁর চাঁটগা দর্শন। শহরে মফস্বলের বিভিন্ন দিক থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য লোকে ভিড় করছে।
সার্কিট হাউজের গেটে বন্ধু রহমান আলীর (কলেজিয়েট স্কুলে আমার সহযোগী) সাথে দেখা। তাঁর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে খোকনকে (সে মুক্তিবাহিনীতে ছিল) পাঞ্জাবীরা মেরে ফেলেছে। সার্কিট হাউজের এক কামড়ায় সভার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি কয়েকজন অফিসার, জেলা প্রশাসক, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের লোক তদারক করছে। গিয়ে দেখলাম, মেজদা (সাহিত্যিক মাহবুব উল আলম), আবুল ফজল সাহেব, প্রিন্সিপাল আবু সুফিয়ান, ড. ইন্নাস আলী (তখনকার উপাচার্য চট্টঃ বিশ্বঃ), প্রফেসর যোগেশ সিংহ, ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন, ভাইপো শিল্পী সবিহ উল আলমÑএরা হাজির।
আমার সাথে ছিল কবি আইনুন নাহার (সম্পর্কে আমার শালী)। শেখ মুজিব তখনো সভাকক্ষে আসেননি, তিনি মেইন গেইটের মুখে বারান্দায়, সেখানে হিন্দু পরিবারের কয়েকজন মেয়ে/পুরুষ বিশেষ জরুরী কথা বলার জন্য তাঁকে থামিয়ে ফেলেছে। তিনি অত্যন্ত হৃদয়বান দেশপ্রেমিক। দেশের যে কোনো লোকের কথা শুনতে প্রস্তুত। এসব সেরে সভাকক্ষে ঢুকেই তিনি আমাদের সকলকে লক্ষ্য করে বললেন ঃ আপনারা তো বাঁচতেন না, ভাগ্য ভালো সুধীসমাজের আপনারা বেঁচে গেছেন। তিনি আমাদের সকলের সঙ্গে করমর্দন করলেন। ...শেখ মুজিব আসন নিয়ে আবুল ফজল সাহেবকে সভা পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করলেন। আবুল ফজল বললেন, আজ ত থাকবেন, আমরা আপনার বক্তব্য শুনবো। তবুও শেখ মুজিব বললেন, না, আপনি মুরুব্বী মানুষ আমার পাশে থাকবেন।’
বঙ্গবন্ধু সেদিন উপস্থিত বুদ্ধিজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন দেশের প্রধান সমস্যা কী? তিনি সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্যও দেন। ওহীদুল আলম মন্তব্য করেন, ‘সেদিন আমি শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারলাম। শেখ মুজিবুর রহমান একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হৃদয়বান লোক। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করছেন। তাঁর বন্ধুপ্রীতির তুলনা নেই।’
পরদিন তিনি পলোগ্রাউন্ড ময়দানে ভাষণ দেন। এতে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য চট্টগ্রামের নেতা-জনতার অবদানের কথা স্মরণ করেন। এরপর তুলে ধরেন সারা দেশের সার্বিক বিপর্যস্ত অবস্থার কথা। তিনি বিধ্বস্ত এই দেশের পুনর্গঠনে শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি জনগণের দুঃখ-দুর্দশার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির মানুষের অসৎ মনোবৃত্তি-দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ঘুষ, দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন।
মুহাম্মদ শামসুল হক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাকর্মী, সম্পাদক-ইতিহাসের খসড়া।