
চট্টগ্রামের বিভিন্ন দাবিতে যিনি সবসময় আওয়াজ তুলেছেন তিনি হলেন আপামর গণমানুষের নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আজ তাঁর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী।
নানা রাজনৈতিক সংকটে চট্টগ্রামের মানুষের পাশে থেকে এই আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে উঠেছিলেন ‘চট্টলবীর’। তার মৃত্যুতে প্রশংসা ঝরেছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কণ্ঠেও। প্রিয় নেতা মৃত্যুর খবর শুনে ২০১৭ সালের এদিনে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল চট্টলায়। তার জানাজায় হাজির হয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছিল লাখো জনতা।
১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্ম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। বাবা হোসেন আহমদ চৌধুরী ছিলেন রেলওয়ে কর্মকর্তা। মা বেদুরা বেগম।
১৯৬২ সালে এসএসসি পাশ করেন। রাজনীতির হাতেখড়ি হয় জহুর আহমদ চৌধুরীর হাত ধরে। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বাবার আদেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানের পাট না চুকিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। পরে চলে যান কমার্স কলেজে।
সিটি কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং আইন কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এরপর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সেসময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রমিক রাজনীতির সাথে যুক্ত হন আবুল বাশার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেন। ওই সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি কলকাতায় চলে যান। এরপর ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বেওয়ারিশ মরদেহ নিজ কাঁধে বহন করে দাফন ও সৎকার করে চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান মহিউদ্দিন চৌধুরী।
চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে ছাড় দেননি মহিউদ্দিন চৌধুরী। সরকারের উপর নির্ভর করে না থেকে নিজস্ব আয় দিয়ে চসিক পরিচালনা করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে উদাহরণ তৈরি করেছিলেন। চসিকের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে তিনি অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাতে পেরেছিলেন।
১৯৯৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েই মহিউদ্দিন চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০০০ সালে দ্বিতীয় দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০০৫ সালে তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তিন তিনবার নির্বাচিত হয়ে টানা ১৭ বছর তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ছিলেন। ২০১৫ সালে আবার মেয়র প্রার্থী হলেও দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি মেয়র প্রার্থী থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
আমৃত্যু চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে বারবারই না বলেছেন চট্টগ্রাম থেকে দূরে সরতে চাননা বলে। যে মাসে তার জন্ম, সে বিজয়ের মাসে এই মহান বীরের মৃত্যু এখনো চিরস্মরণীয় হয়ে আছে চট্টলবাসীর মনে।
এআই