বুধবার ২৯ নভেম্বর ২০২৩

| ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১১:২৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

আলমগীর মোহাম্মদ

‘আমার ভেতর তীব্র ক্ষরণ হতে থাকে এই দিবসে’

প্রকাশের সময়: ১১:২৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

আলমগীর মোহাম্মদ

‘আমার ভেতর তীব্র ক্ষরণ হতে থাকে এই দিবসে’

ফাইল ছবি

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। একাত্তরের মার্চ মাসের শুরুতেও অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে ঘাতকের দল। বাঙ্গালী জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিজয়ের ঠিক দুই দিন আগে এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায় পাক হানাদার বাহিনী। 

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে হানাদাররা বুঝতে পেরেছিল তাদের পরাজয় অনিবার্য। তখন তারা এক ঘৃণ্য চক্রান্তের ফাঁদ ফেলে। তালিকা করে নেয় বাংলার বরেণ্য মানুষের। দেশমাতার বরেণ্য সন্তানদের হত্যা করতে নামে তারা। ঘাতক বাহিনীর সাথে হাত মেলায় আলবদর ও আলশামস। ২৫ মার্চের কালরাত্রির সেই ভয়ানক নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটায় তারা। অদূর ভবিষ্যতে দেশকে মেধাশক্তিশুন্য করার দুরভিসন্ধিমূলক এই পদক্ষেপের জন্য পাক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা চিরকাল ধিক্কৃত হবে। 

২৫ শে মার্চ কালরাত্রি থেকে বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত যেসব বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে আমরা হারিয়েছি তাঁদের মধ্যে আছেন- অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সেলিনা পারভীন প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। 

দীর্ঘ চব্বিশ বছর পাকিস্তানি দুঃশাসনকালে এদেশের লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের মেধা, মননকে কাজে লাগিয়ে জাতির বিবেক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন। নিজেদের জ্ঞান, বিবেচনাবোধ দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ঠিক এই কারণে তাঁরা হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। ১৪ ডিসেম্বরের এই হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

আমার ভেতর তীব্র ক্ষরণ হতে থাকে এই দিবসে। একক ভাবে এ হত্যাকাণ্ডে শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেন ৯৯১ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা চিকিৎসক ৪৯ জন। ব্যাপকভাবে শিক্ষক হত্যার কারণ ছিলো তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা যা পাকিস্তানবাদী ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।

একাত্তর সালের ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ। আশার কথা হলো বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগমুহূর্তে এসে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সক্ষম হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এদেশীয় দোসরদের বিচার সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। 

জাতির সূর্যসন্তান, যাদেরকে আমরা ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর হারিয়েছি তাঁদের স্মরণে আজকের এই দিবস পালন করছি আমরা। তাঁদের ত্যাগের যথার্থ মূল্যায়ন হবে তখনই, যখন আমরা সততা, নিষ্ঠা, ও আন্তরিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটা আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। 

লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক

মহানগর নিউজ/এআই