সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৪:১৭, ৪ মার্চ ২০২২

জুয়েল নাগ

শিশুদের জন্য যুদ্ধ নয়

প্রকাশের সময়: ১৪:১৭, ৪ মার্চ ২০২২

জুয়েল নাগ

শিশুদের জন্য যুদ্ধ নয়

সুকুমার রায় এর একটি কবিতা দিয়ে শুরু করি- ‘কত মায়া ও আবেগ দিয়ে শিশু লালন হয় হাজারো মায়ের বুকে। আর এই ভালোবাসার মৃত্যু হয় যুদ্ধে।’

কবি বলেন-

‘শিশুর মুখে হেরি তরুণ রবি, 
উৎসারিত আনন্দে তার জাগে জগৎ ছবি। 
হাসিতে তার চাঁদের আলো, পাখির কলকল, 
অশ্রুকণা ফুলের দলে শিশির ঢলঢল।’

 
মা বলেন-

‘এই দুরুদুরু মোর বুকেরই বাণী, 
তারি গভীর ছন্দে গড়া শিশুর দেহখানি। 
শিশুর প্রাণে চঞ্চলতা আমার অশ্রুহাসি, 
আমার মাঝে লুকিয়েছিল এই আনন্দরাশি।’

পৃথিবীর মহা শক্তিধর রাশিয়া যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন শুরু হবে ধ্বংসের তাণ্ডব লীলা। শুধুমাত্র সাম্রাজ্য দখল নিয়ে যুদ্ধের ফলে প্রাণ হারাবে লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ শিশু। অনেক নারী ও শিশুরা এ যুদ্ধের ফলে শিকার হবে বিকৃত যোনাচারের। এ যুদ্ধ মুক্তির জন্য নয়, এ যুদ্ধ স্বাধীনতার জন্য নয়, দখলের। দায়িত্বের জন্য যুদ্ধ কাম্য নয়।

সিরিয়ার সেই তিন বছরের একটি শিশুর কথা মনে আছে যুদ্ধের ভয়ানক চেহারা দেখে বোমায় ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে বলেছিল- ‘আমি ঈশ্বরকে সব বলে দেব’।

এর অর্থ- তার অভিযোগের বিচার পৃথিবীর কোনো মানুষ করতে পারে না। এ পৃথিবীর প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছে। যুদ্ধের গোলার আঘাতে যখন ছিন্ন হবে দেহ, চোখ উপড়ে যাবে, হাত-পা উপড়ে যাবে, রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকবে শিশুদের লাশ! কি এক বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হবে যুদ্ধের ফলে? ভেবে দেখছে কি বিশ্বের এই মুখোশ পড়া আধুনিক সভ্যতা?

শুধুমাত্র ওই দেশের শিশুরা নয়, এ যুদ্ধের পরিবেশ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মানব শিশু অবলোকন করবে, তাদের মানসিক প্রভাবটা কেমন হবে একবার ভেবে দেখুন!

মারাত্মকভাবে এর প্রভাব পড়বে সারাবিশ্বের শিশুদের কাছে। মানবতার কোন সংজ্ঞা দিয়ে বুঝাবেন শিশুদের? মানুষের ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছে শিশুরা। সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত নয় মানবতা ও শিশুরা। ওরা শুধু চায় যুদ্ধ, চায় সাম্রাজ্য। যুদ্ধের ভয়াবহতা কত করুণ যারা ভুক্তভোগী তারাই বলতে পারে। 

২০১৭ সালে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

সংঘাতপূর্ণ ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান ও মিয়ানমারে শিশু ধর্ষণ, জোরপূর্বক বিয়ে, অপহরণ ও দাসত্বপ্রথা সাধারণ কৌশল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কিছু শিশু জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে। যুদ্ধের কারণে সরাসরিভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে অন্য শিশুরাও। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে ত্রাণকর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় খাদ্য, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে সেখানকার শিশুরা অপুষ্টি ও নানান রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

আইনস্টাইন বলেছেন, ‘এই পৃথিবী কখনও খারাপ মানুষের, খারাপ কাজের জন্য ধ্বংস হবে না। যারা খারাপ মানুষের খারাপ কাজ দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।’

বিশ্বে শিশুদের নিরাপদ রাখতে প্রতিটি মানুষের উচিৎ যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া। এর ফলে আমরা শিশুদের সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারবো। কারণ যুদ্ধ কারও জন্য সুখকর নয়।

লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক। 
 

এআই