সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
০৫:৪৭, ১ মার্চ ২০২২

ইমরান চৌধুরী 

মার্চের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল

প্রকাশের সময়: ০৫:৪৭, ১ মার্চ ২০২২

ইমরান চৌধুরী 

মার্চের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল

 বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজর রহমান

‘মার্চের শুরুতেই চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমরা যারা নিউক্লিয়াস ছাত্রলীগ তারা চটগ্রাম মেডিকেল কলেজ মাঠে লাঠি নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। এছাড়া ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, কলেজিয়েট স্কুল ও ছাত্র ইউনিয়ন আন্দরকিল্লার এম এস স্কুলে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু করে। ৩ মার্চ পাকিস্তান যখন জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করে তখন আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি আরও জোরালোভাবে শুরু হয়।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে  বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজর রহমান মহানগর নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা তুলে ধরেন।

ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন,  প্রতিরোধ যুদ্ধের শুরুতে ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম শহর বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীর (ইপিআর, বাঙালি সেনা, পুলিশ ও আনসার) নিয়ন্ত্রণে ছিল।

ধীরে ধীরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে পিছু হটতে হটতে বাঙালি সেনা, রাজনৈতিক কর্মী, সচেতন জনগণের এক অংশ শহর ছেড়ে চলে যায়। চট্টগ্রাম শহরের পতন ঘটে এপ্রিলের প্রথম দিকেই। শহরের রাজনৈতিক কর্মীদের ব্যাপক অংশ প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিতে শহর ছেড়ে চলে গেলেও এক ক্ষুদ্র দায়িত্বশীল অংশ বিভিন্ন কারণে শহরে অবস্থান করতে থাকেন। 

দায়িত্বশীল ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের এক অংশ মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। উদ্যোক্তারা যেহেতু শহর ও জেলা পর্যায়ের নেতা ও কর্মী ছিলেন, তাদের এ উদ্যোগ অচিরেই শহরব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক কর্মীরা ধীরে ধীরে এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হতে থাকেন। একেবারে শুরুতে এ উদ্যোগ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সাধারণ মানুষ যুদ্ধে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। 

তিনি বলেন, আমাদের এ তৎপরতা স্থানীয় মানুষরা প্রথমে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি। তাদের ধারণা ছিল আমাদের মত বাচ্চা ছেলেরা আধুনিক মারণাস্ত্র সজ্জিত সুসংগঠিত হানাদার বাহিনীর বিরদ্ধে কিছুই করতে পারবে না। তাই মৌলভী সৈয়দের নির্দেশে আমাদের দলে নতুন মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটের ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা দিয়ে জনমত গঠনের জন্য গোপনে লিফলেট ছাপিয়ে তা ব্যাপকভাবে বিলি করার ব্যবস্থা করি। এসব লিফলেট যেহেতু কোনো ছাপাখানা হতে ছাপানো সম্ভব নয়, তাই পুরান সাইক্লোস্টাইল মেশিন সংগ্রহ করে, নিজেরাই তা ছাপাই। এগুলো বিলি করি রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা ও দোকানদারদের মাঝে। ব্যাপক সাড়াও মিলে।

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টা ট্রেনিং সেন্টার ছিল জানিয়ে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘শহরের কোথায় ট্রেনিং সেন্টার ছিল, সাধারণ জনগণ জানতো। মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় থাকত অনেকটা ওপেন সিক্রেট ছিল। কিন্তু কেউ কখনও এটা পাকিস্তানিদের বলেনি। উল্টো নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতো। জনগণ যদি পাশে না থাকত, আমরা একদিনও চট্টগ্রামে টিকে থাকতে পারতাম না। এ কথাটা বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সত্য। কারণ আমি সারা দেশ ঘুরে মুক্তিযুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কিছু কিছু জায়গায় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণ পাশে ছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহজ বিজয় হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই জানিয়ে মাহফুজুর রহমান বলেন, “জনগণকে বাদ দিয়ে যদি কেউ বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ফেলেছি, এটা কাল্পনিক কথা। এটা অনেকেই বলেন। একাত্তর সালে হাতেগোনা জনগোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে  সম্পৃক্ত ছিল।
 

কেডি