বৃহস্পতিবার ০৮ জুন ২০২৩

| ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
০০:৪২, ১৫ আগস্ট ২০২১

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুক্তির প্রবক্তা

প্রকাশের সময়: ০০:৪২, ১৫ আগস্ট ২০২১

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুক্তির প্রবক্তা

কামরুল হাসান বাদল «

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডটি শুধু বাংলাদেশেরই নয় বিশ্বরাজনীতি ও সভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না যে, এই হত্যাকাণ্ডটি স্রেফ কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয়। কিংবা শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার বদলও নয়। নিষ্ঠুরতার দিক থেকে তো বটেই, হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও ষড়যন্ত্রের দিক থেকেও এই হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দাবি রাখে। অনেকটা একটি বিপ্লবের পর আরেকটি প্রতিবিপ্লবের মতো। সুন্দর ও শোভনের বিরুদ্ধে অসুন্দর, অসুরের অভ্যুত্থানের মতো। মানবতার বিরুদ্ধে দানবের উত্থানের মতো। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড স্রেফ একজন রাষ্ট্রনায়ক হত্যা করে ক্ষমতার রদবদল করার মতো বিষয়ও ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে ঘাতকরা অনেক কিছুকেই হত্যা করেছিল সেদিন।

দ্বিজাতি তত্ত্ব বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাগ হওয়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে থেকে নতুন যে দেশটি স্বাধীন করলেন বঙ্গবন্ধু তা ছিল এ উপমহাদেশের রাজনীতির বড় ব্যতিক্রম, বড় পরিবর্তন। হিন্দুদের জন্য ভারত আর মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান এমন ধারণা ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বাইরে তিনি একটি সম্পূর্ণ আলাদা রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করলেন যা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ। যে রাষ্ট্রটির জন্মই হয়েছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সম্মিলিত আন্দোলন-সংগ্রামে এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।

সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রটির জন্য বঙ্গবন্ধু চারটি মৌলিক নীতি গ্রহণ করেন। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্রে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সংবিধানের শুরুতে উৎকীর্ণ করেন ‘জনগণই হইবে প্রজাতন্ত্রের মালিক’। এই চার মূলনীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কারণেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে আমি মনে করি অন্তত।

পাকিস্তানের ২৩ বছরে দেশে কখনো প্রকৃত গণতন্ত্র ছিল না। তিনি স্বাধীন বাংলার মূলনীতিতে গণতন্ত্রকে প্রথমে স্থান দিয়েছিলেন।

পাকিস্তান ছিল অসাম্যের দেশ। শোষক ও লুটেরা পুঁজিপতিদের দেশ। সম্পদের সুষম বণ্টন এবং ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য বিলুপ্ত করা এবং দেশের সম্পদের মালিক জনগণকে করার লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রকে দ্বিতীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেন।

দেশভাগের আগে ও পরে তিনি এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতাকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ফলে তিনি এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যার চেতনায় থাকবে অসাম্প্রদায়িকতা। সব ধর্মের মানুষের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে অন্যতম নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আর বাঙালির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণ বা রেনেসাঁর যে প্রয়োজন তা তিনি অনুধাবন করেই এই জাতীয়তাবাদকে উজ্জীবিত করেছেন এবং জাতিগত ঐক্যের লক্ষ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর এই নীতিগুলো ছিল বৈপ্লবিক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের জন্য অনেকটা দুঃসাহসিক। কারণ তখন তো বটেই বর্তমানেও পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং এ ধরনের আদর্শ ও নীতিভিত্তিক কোনো মুসলিম রাষ্ট্র নেই বিশ্বে। ফলে একদিকে তিনি কট্টর মুসলিমদের বিরাগভাজন হয়েছেন অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র এবং দেশীয় পুঁজিপতিদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। এই দুই অপশক্তির অভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে নিহত হতে হয়। তাঁর হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই ঘাতকদের সেই উদ্দেশ্য আমরা লক্ষ্য করি। তারা সেদিন শুধু তাঁকে এবং পরিবারের সবাইকে হত্যা করে নিবৃত্ত হয়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মনিকেও হত্যা করেছিল।  শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশে থাকলে তাদেরও হত্যা করতো ঘাতকরা। কারণ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার এমন কাউকে তারা বাঁচতে দিতে চায়নি। তাদের লক্ষ্যই ছিল দেশটির খোল-নলচে সম্পূর্ণ পাল্টে দিতে। ভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা যদি না বাঁচতেন, তিনি যদি দেশে ফিরে দলের হাল না ধরতেন এবং শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে যেতে না পারতেন তাহলে আজ আমাদেরকে বাস করতে হতো মোশতাক, জিয়া, এরশাদের বাংলাদেশ নামক পাকিস্তানের ভাবাদর্শের একটি দেশে।

আজ জাতীয় শোক দিবসে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। দলীয় ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগেও দিবসটি পালিত হবে। তাঁর কথা উচ্চারিত হবে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হবে। তবে আমি মনে করি শুধু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে নয়, তার আদর্শ ও নীতি প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়েই তাঁকে সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধা জানানো যাবে। দেশে তো বটে বর্তমানে বিশ্বরাজনীতির জন্যও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতি আলোচিত হওয়া এবং তা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।

তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ শুধু আজ বাংলাদেশের জন্যই নয়, বিশ্বের দেশে দেশে যেখানেই মানুষ নিগৃহীত হচ্ছে, শোষিত হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার শিকার হচ্ছে সেখানেই মুক্তির বারতা নিয়ে আসবে। কারণ মানুষের সার্বিক মুক্তিই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।

বিশ্বের অনেক নেতাই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন একমাত্র নেতা, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাজেই যতদিন বিশ^জুড়ে মানুষের মুক্তির আন্দোলন থাকবে, মুক্তির লড়াই থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন, অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। মানুষের মুক্তিযুদ্ধে দেদীপ্যমান হয়ে থাকবেন।