
ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার (ফাইল ছবি)
আমরা কথায় কথায় খুব বড়াই করে বলি, ভাষার জন্য একমাত্র রক্ত দিয়েছি আমরাই। বলার মধ্যে মিথ্যে নেই এবং বাহুল্যও নেই তবে একটা ফাঁক আছে। সে ফাঁকটি কী? তাহলো চেতনাগত, ধারণগত। অর্থাৎ ভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় রক্ত দিয়েছি বটে তবে তা চেতনায় শাণিত করে নিতে পারিনি। আর ধারণগত দুর্বলতাটি হলো, আন্দোলনের ত্যাগ, আদর্শ, লক্ষ্য ও চেতনাকে ধারণ করতে না পারা।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আজ সবাই স্বীকার করেন যে, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সকল কিছুকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছিল এই আন্দোলন এবং এই আন্দোলনের সফলতা বাঙালির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে দিয়েছিল।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা এই আন্দোলনের প্রেরণা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এরপরও আমাদের মনোজাগতিক দৈন্যকে আমরা দূর করতে পারছি না। এত বছর পরও যখন সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের জন্য হাইকোর্টকে রুল জারি করতে হয় কিংবা সিটি করপোরেশনকে বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাতে হয় তখন তা যুগপৎ লজ্জা ও গ্লানির বিষয় হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন আসে এই ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্যেই কি আমরা রক্ত দিয়েছিলাম? তাহলে বাংলায় সবকিছু লিখতে, বাংলায় পড়তে আমাদের এত আপত্তি কেন? সবাইতো বাঙালি। বাংলা তো সবারই বোধগম্য তবে কেন প্রতিষ্ঠানের নাম শুধু ইংরেজিতে হবে? কেন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ইংরেজিতে হবে?
এ বড় দীনতা আমাদের। নিজ ভাষাকে এত গৌণ করে কেন দেখছি আমরা? ইংরেজিতে আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে আমরা কি নিজেদের একটু অভিজাত বলে প্রতিপন্ন করতে চাইছি?
ভাষার জন্য কিন্তু কোনো অভিজাতরা রক্ত দেয়নি। স্বাধীনতার জন্য কিন্তু খুব বেশি অভিজাতরা রক্ত দেয়নি। এই ভাষা, এই দেশ মূলত সাধারণ বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। কাজেই নিজেদের অভিজাত শ্রেণির না ভেবে সাধারণ ভাবলে
ভূমিসন্তান হিসেবে সম্মান আরও বৃদ্ধি পাবে। মাতৃভাষায় কথা বলা বা চর্চা করার মধ্যে গ্লানি নেই, আছে গৌরব। আসুন গৌরবকে ধারণ করি, গ্লানিকে পরিত্যাগ করি।