সোমবার ০৫ জুন ২০২৩

| ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৯:১৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১

কামরুল হাসান বাদল

‘তবু অনন্ত জাগে’—কামরুল হাসান বাদল

প্রকাশের সময়: ১৯:১৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১

কামরুল হাসান বাদল

‘তবু অনন্ত জাগে’—কামরুল হাসান বাদল

‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’

এ বছরটি কেটে গেল অতিমারিতে। ২০২০ সালের শুরু থেকে সারা বিশ্ব কভিড-১৯ নামের অতিমারির তাণ্ডবের শিকার হয়। এর কবলে এ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।

এ বছরের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও নতুন করে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতসহ নানা দেশ আবার জনসমাগমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম আর উদ্যোগের কারণে ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করা হয়েছে। এর আগে আর কোনো টিকা এত দ্রুত সময়ে উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব টিকা তাদের নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে যখন করোনার সংক্রমণ প্রায় ঠেকিয়ে ফেলেছে, মানুষের মনে স্বস্তি আস্থা ফিরে আসছে ঠিক তখনই গত ২৬ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসের এক নতুন ধরনের খবর জানাল। যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অনেকে বলছেন, এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের হার বেশি হলেও মৃত্যুর হার বেশি হবে না। এরই মধ্যে অনেক দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে।  বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।

টিকা প্রদানের শুরুতে বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুযায়ী টিকা না পেয়ে হোঁচট খেলেও পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেছে। ইতিমধ্যে দেশেই টিকা উৎপাদনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।  মুখে খাওয়ার ওষুধও বাজারে চলে এসেছে।

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের সকল কিছু মুখ থুবড়ে পড়েছিল শুরুতে কিন্তু সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও সব শ্রেণিপেশার মানুষের মিলিত প্রচেষ্টায় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। অতিমারির মধ্যেই আমাদের উন্নয়নের গতি অব্যাহত ছিল। পদ্মা সেতু,  বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলেছে। তৈরিপোশাকশিল্প ও রেমিট্যান্সের দিক থেকেও হতাশাজনক কোনো খবর আসেনি। বরং তৈরিপোশাক কারখানার কাজ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

অতিমারিতে বিশ্ব অনেক বরেণ্য সন্তানদের হারিয়েছে।  বাংলাদেশও হারিয়েছে তার সুসন্তানদের, যাঁদের শূন্যস্থান কখনো পূর্ণ হওয়ার নয়। এর পাশাপাশি বছরের শেষের দিকে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে।  এই মর্মান্তিক ও দেশ তোলপাড় করা ঘটনায় দেশের সবাই বেদনাক্রান্ত হয়েছে।  রায়ে ২০ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।  পুরো বিষয়টি গভীর দুঃখজনক। একুশটি মেধাবী শিক্ষার্থীর এই পরিণতিতে অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজে প্রচণ্ড হতাশা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে মারামারির ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে।  অতিমারির কালে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী ও শিশুদের ওপর অনেক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। বেড়েছে আত্মহত্যার ঘটনা। কভিডের অভিঘাত মানুষের মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব রেখে যাচ্ছে যা থেকে সহজে উত্তরণের উপায় দেখা যাচ্ছে  না। সারা বিশ্বের মতো কভিডের কারণে লকডাউনে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনোজগতেও জটিল ছাপ ফেলতে শুরু করেছে যদিও বছরের শেষে এসএসসি, এইচএসসিসহ সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে সীমিত সিলেবাসে। এখন অমিক্রনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরেক দফা বন্ধের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

করোনাকালে স্বাস্থ্যবিভাগের অনিয়মের আলোচনাও ছিল বছরজুড়ে। বছরের শেষের দিকে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন লেগে ৪১জনের মৃত্যুর ঘটনা গভীর শোক সৃষ্টি করেছে জনগণের মনে।

এর সঙ্গে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিরোধীদল মাঠে অবস্থান নিয়েছে যদিও তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

বছরের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ উদযাপন দুর্গাপূজার সময় পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা।  যা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এতকিছু সত্বেও বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে।  মধ্য আয়ের দেশে পদার্পনের লক্ষ্যে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। সে সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী কিছু অভিযানও করেছে সরকার। উৎপাদন ও বন্টনে বিশাল ঘাটতি না থাকলেও দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, বেড়েছে মূল্যস্ফিতিও।

তারপরও বলতে হয় খুব খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। কারণ শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা ও পদক্ষেপ জাতিকে সঠিক পথেই পরিচালিত করেছে। সামনের দিনগুলো আরও ভালো হবে সে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার রোল মডেল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশটির নাম অনেক সমীহের সঙ্গে উচ্চারিত হয়।

এই অতিমারি অনেককিছু পাল্টে দিয়েছে।  বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তিকে জনগণের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।  এর হাওয়া লেগেছে সংবাদপত্রেও। পাঠক খুব দ্রুত অনলাইনমুখী হয়েছে।  কমে আসছে প্রিন্টভার্সনের সংখ্যা।  আগামী দিনগুলো আরও অধিক প্রযুক্তি নির্ভর হবে। আমাদের দৈনন্দিন অনেক অভ্যাস পাল্টে যাবে।  এর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। পরিবর্তনকে ইতিবাচক পথে ধাবিত করতে হবে।

মানুষের পরাজয় নেই। একদিন অতিমারিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করবে মানুষ।  আবার মানুষের জয়গানে রচিত হবে নতুন অধ্যায়, নতুন ইতিহাস। নতুন বছরে বিশ্বের মানুষ এই স্বপ্নে উজ্জীবিত হোক। নতুন বছর সতত শুভ ও কল্যাণের হোক।

লেখক : সম্পাদক, মহানগর নিউজ। 

মহানগর নিউজ/এআই