সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১১:৩৪, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

কামরুল হাসান বাদল

বিজয়ের প্রাক্কালে (পর্ব ৩)

প্রকাশের সময়: ১১:৩৪, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

কামরুল হাসান বাদল

বিজয়ের প্রাক্কালে (পর্ব ৩)

ভারতকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে চরম ভুল করে পাকিস্তান। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো বারবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা প্রভৃতি এলাকায় পাক সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা চালায়। ঢাকা তখন পাকবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। এই ঘাঁটিতেই ছিল তাদের অধিকাংশ জঙ্গিবিমান। সেখানে ছিল দুই স্কোয়াড্রন অর্থাৎ ২৮টি জঙ্গি বিমান। প্রথম রাতের আক্রমণেই পাকিস্তানের প্রায় অর্ধেক বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

বিমান হামলার পাশাপাশি সারাদেশে মিত্রবাহিনীর হামলা ও আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ৪ ডিসেম্বরও বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। এ দিনে ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল (তৎকালীন) সিআর দত্ত এবং মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী সিলেটের কানাইঘাট দখলের পর এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে। ৩নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী শমসের নগর বিমানবন্দর ও আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করে। পাকিস্তানি নৌবাহিনীর সাবমেরিন পিএনএস গাজী বিশাখাপত্তম বন্দরের কাছে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

এদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বেতার ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, 'আমাদের বীর সেনানিরা অত্যন্ত দৃঢ়তা নিয়ে শত্রুর হামলা প্রতিহত করে চলেছে।’ অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার প্রধান ও আলবদর বাহিনীর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক ও আল বদর হাইকমান্ড সদস্য মীর কাশেম আলী তাদের ভাষায় হানাদার হিন্দুস্তানী বাহিনীর হামলার দাঁতভাঙা জবাব দেবার জন্য সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান। তারা বলেন, 'ছাত্রসমাজ ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি লড়ে যাবে।'

পাকিস্তানি জান্তা এবং তাদের এদেশীয় দোসর দালালরা যতই আস্ফালন করুক না কেন বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিদিন-প্রতিঘণ্টায় শিথিল হয়ে আসছিল। অমিত তেজের বাঙালি তরুণরা সেদিন ভালোবেসেই যুদ্ধে গিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে দেশমাতাকে স্বাধীন করার লক্ষ্যেই যুদ্ধে গিয়েছিল তারা।

গীতিকার গোবিন্দ হালদারের লেখা গানটিতে এই চিত্র অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে-

'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি

মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।।

যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা

যার নদী জল ফুলে ফলে মোর স্বপ্ন আঁকা

যে দেশের নীল অম্বরে মন মেলছে পাখা

সারাটি জনম সে মাটির দানে বক্ষ ভরি।।

মোরা নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি

মোরা নতুন একটি গানের জন্য যুদ্ধ করি

মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি

মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি।

যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে

যে শিশুর মায়া হাসিতে আমার বিশ্ব ভোলে

যে গৃহ কপোত সুখ স্বর্গের দুয়ার খোলে

সে শান্তির শিবির বাঁচাতে শপথ করি।।

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি

মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।।’

লেখক : কবি ও সাংবাদিক