সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৯:০০, ৭ জানুয়ারি ২০২২

কামরুল হাসান বাদল

এক শত ভাগ সফলতা চাই

প্রকাশের সময়: ১৯:০০, ৭ জানুয়ারি ২০২২

কামরুল হাসান বাদল

এক শত ভাগ সফলতা চাই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

একটি ঝলমলে রাত। উচ্ছ্বল রাত। প্রাণোৎসবের মাঝে ক্যান্ডল ডিনার। ইউরোপের ছিমছাম একটি শহরে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া দুই বোনের সেটিই ছিল জীবনের প্রাণ খুলে আনন্দ উদযাপন করার ক্ষণ। এই রাতের পর তাদের জীবনে আর কখনো প্রকৃত অর্থে ভুবন দোলানো আনন্দ আসেনি। ওই দুইবোন জার্মানির বনে থাকা অবস্থায় সেই রাতে অবারিত আনন্দে মেতে উঠেছিলেন যখন তখন তারা ভাবতেই পারেননি রাত পোহালেই জীবনের চরম দুঃসংবাদটি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ভোর হতে হতে তারা সংবাদটি শুনলেন। দেশে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনাটির খবর শোনা মাত্র বড় বোন আবেগে আতঙ্কে জার্মানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞেস করেন ‘কেউ কি বেঁচে নেই’? উত্তরে মাথা নাড়েন রাষ্ট্রদূত। এরপর শুরু হলো দু’বোনের উদ্বাসু্ত জীবন। যারা এক সময় এই পরিবারের কারো সাথে সামান্য পরিচয় বা কথা বলতে পারলেই বর্তে যেতেন তাদের বেশিরভাগই সে সময় ওই দু’বোনের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। কোথাও ঠাঁই না পেয়ে ইন্দিরা গান্ধীর আহবানে ভারতে যাওয়ার পথে বিমানে খবরের কাগজে বিশদ ঘটনা জানতে পারেন তাঁরা। সে হতভাগ্য দু’বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

রাজকন্যার জীবনযাপন করেননি তারা কখনো। সে অভিধায়ও অভিষিক্ত হতে চাননি কখনো। কিন্তু ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডটি তাদের একেবারে নিঃস্ব করে, রিক্ত করে পথের ধূলায় নামিয়ে দিয়েছিল। এরপর শুরু হয়েছিল তাদের উদ্বাসু্ত জীবন যা শেষ হয়েছিল ১৯৮১ সালের ১৭ মে, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে।

শেখ হাসিনাকে যখন দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয় তখন দেশের ক্ষমতায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, ১৫ আগস্ট ইতিহাসের বর্বরতম সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধানের দায়িত্ব পালনকারী এবং সংসদে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি বিল পাশকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অনেক আবেদন নিবেদন করে শেখ হাসিনা সে সময় দেশে, নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসার অনুমতি পেয়েছিলেন।

বাংলাদেশের দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে, বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার ৩২ নম্বর ধানমন্ডি বাড়িটি তখন জিয়া সরকার তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। দেশে ফিরে পিতামাতাসহ পরিবারের সবাইকে হারানো শেখ হাসিনা সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন সে বাড়িতে বাবা মা ও নিহত সকল আত্মীয়ের রুহের মাগফেরাত কামনার্থে দোয়া মাহফিল করতে। কিন্তু সে সময় জিয়াউর রহমান এবং তার সরকার শেখ হাসিনাকে সে অনুমতি দেয়নি।

গত বছরের শেষ দিন শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর পদ্মা সেতু পরিদর্শন করার সংবাদ যখন পাই তখন বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না আমার কারণ, শেখ হাসিনা দেশে আসতে পারবেন সে আশাও একদিন করতে পারেনি অনেকে। অন্তত ২৪ বার যে নেতাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে সেই তিনি, চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়ে এবং একটানা ১৩ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে অসম্ভব বলে আখ্যায়িত স্বপ্নের পদ্মা সেতু পায়ে হেঁটে ও গাড়ি চেপে পার হলেন। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও প্রথমবারের মতো চলাচল করলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় গত শুক্রবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু পরিদর্শনের ছবি প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তবে এ সময় মন্ত্রী, এমপি, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কেউ ছিলেন না।

প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে সেতুর সাত নম্বর পিলার থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার পথ হাঁটেন। পরে আবার গাড়িতে ওঠেন। গাড়িবহর সেতু পার হয়ে পদ্মার জাজিরা প্রান্তে যায়। সেখান প্রধানমন্ত্রী নাস্তা করেন। এরপর গাড়িতে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ফেরার পথে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু গাড়িতে পার হন প্রধানমন্ত্রী। ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা।

বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী গতকাল ৭ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণে তাঁর সরকারের উন্নয়নকাজের চিত্র তুলে ধরেন। 

সে বিষয়ে আমার বলবার কিছু নেই শুধু সাধারণ মানুষ হিসেবে বলতে চাই। বলেছিলেন, জাতির পিতার হত্যার বিচার করবেন—করেছেন।

বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন— করছেন, প্রচণ্ড ঝুঁকি ও চাপ সত্ত্বেও ।

বলেছিলেন, আরেকবার ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিবাজদের বিচার করবেন। কারণ ব্যক্তিগতভাবে আপনি দুর্নীতিগ্রস্ত নন। তাই এ ব্যাপারে কঠোর ও কঠিন হওয়া আপানার পক্ষেই সম্ভব। 

মাননীয় নেত্রী, শোষণহীন, বঞ্চনাহীন ও দুর্নীতিহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল জাতির পিতার। আপনার পাশে দুর্নীতিবাজদের সহ্য হচ্ছে না। দুর্নীতি দমনে আপনার এক শত ভাগ সফলতা চাই এবার।

সম্পাদক : মহানগর নিউজ

মহানগর নিউজ/এআই

সম্পর্কিত বিষয়: