সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১১:৩৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

আলমগীর মোহাম্মদ

‘কমন সেন্স’ ও ‘ন্যায়বোধ’—রাষ্ট্র গঠনের দুটো অপরিহার্য বিষয়

প্রকাশের সময়: ১১:৩৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

আলমগীর মোহাম্মদ

‘কমন সেন্স’ ও ‘ন্যায়বোধ’—রাষ্ট্র গঠনের দুটো অপরিহার্য বিষয়

আজ বাংলাদেশের বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু ডাকে বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র, প্রশিক্ষণবিহীন একটা দল লড়তে শুরু করেছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল দেশপ্রেমের দৃঢ়তা ও অকুতোভয় চরিত্রের কারণে। 

পূর্ববঙ্গের মানুষের বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস মূলত একশো বছরেরও বেশি সময়ের। সেই ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ থেকেই বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস শুরু। বঙ্গভঙ্গ রদ হলো, আরো অনেক পরে ব্রিটিশ হটিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটো আলাদা রাষ্ট্র হলো পূর্ববঙ্গের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হলো না। শেষের ২৩ বছর অর্থাৎ, পাকিস্তানকালে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত ও শোষিত হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে আর্থিক শোষণ ও অধিকার বঞ্চিত হতে হয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষকে। বঞ্চনা ও শোষণের মাত্রা যত বাড়ছিল, সাধারণ মানুষের মনে শোষণের হাত থেকে মুক্তি, অধিকার সচেতনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। 

সেই আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে ১৯৪৮ সালে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার মতো অর্বাচীন সিদ্ধান্ত আসার সাথে সাথে বাংলার কৃষক, ছাত্র, শিক্ষকের মনে ক্ষোভের দানা বাঁধতে শুরু করে। প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেওয়া নেতৃবৃন্দের গণমুখী আন্দোলনের সাথে সাধারণ মানুষের একাত্মতা সৃষ্টিতে বিরাট সহায়ক হিসেবে কাজ করে। ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয় দেশমাতৃকার কিছু সূর্যসন্তান। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখের রক্তের বিনিময়ে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাত্ৃভাষা রক্ষা আন্দোলনে সফলতা লাভ করেন পূর্ববঙ্গের মানুষ। 

শেক্সপিয়ার এর একটা কথা আমাদের বাঙালী জাতির সাথে খুব যায়। তিনি বলেছেন, ‘বীরেরা মরে একবার, ভীরুরা মরে বারবার।’ বাঙালী বীরের জাতি। একবার মরিয়া তাঁরা ভুলে যান মরিবার ভয়। পরবর্তীতে ১৯৫৮’র সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা ও ৬৯ এর গণ অভুত্থান প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সাহস ও বীরত্বের সাথে লড়েছিল এদেশের মানুষ। তারই ধারাবাহিকতা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বিজয় লাভ। 

আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল প্রতিপাদ্য ছিল স্বাধীনতা, সাম্য,  ভ্রাতৃত্ব ও সুখের অন্বেষা । তাঁরও আগে ফরাসি বিপ্লবের প্রতিপাদ্যও ছিল অনেকটা কাছাকাছি। স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব ছিল ফরাসীদের স্লোগান। বাংলাদেশর  স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিনটি প্রতিপাদ্য হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার

আর আমাদের ছিল চারটি মূলনীতি। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। এই চারটা মূলনীতিকে সামনে রেখে বাঙালী সর্বাত্মক সংগ্রামে লিপ্ত হয় হানাদারদের বিরুদ্ধে। সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামটি স্থায়ী আসন গড়ে নেয়। 

বিজয়ের স্পিরিট হলো- সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মাড়িয়ে দেশের উন্নতির লক্ষে কাজ করা। বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছরে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। ইংরেজ লেখক টমাস ম্যুর তাঁর ‘ইউটোপিয়া’ গ্রন্থে একটা ইউটোপিয়ান রাষ্ট্র গঠনের দুটো অপরিহার্য বিষয়ের কথা বলেছেন : ক. কমন সেন্স ও খ. সাধারণ ন্যায়বোধ। 

প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে উপরিল্লিখিত দুটো গুণের চর্চা-ই পারে বাংলাদেশকে একটা আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে। 

লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদ
 

মহানগর নিউজ/এআই