বুধবার ২৯ নভেম্বর ২০২৩

| ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
০৭:৫১, ২২ মে ২০২২

মহানগর ডেস্ক

প্রতিদিনের খাবারে ক্যান্সারের উপাদান শনাক্ত

প্রকাশের সময়: ০৭:৫১, ২২ মে ২০২২

মহানগর ডেস্ক

প্রতিদিনের খাবারে ক্যান্সারের উপাদান শনাক্ত

প্রতীকী ছবি

উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত চাল, বাদাম ও ভুট্টায় লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী অ্যাফ্লাটক্সিন নামক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে সালাদ তৈরির সবজি ও দুগ্ধজাত খাবারে মিলেছে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস নামক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। কর্মশালার আয়োজন করে নেদারল্যান্ডস সরকারের 'বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) ও উচ্চ শিক্ষা প্রকল্প'।

কর্মশালায় গবেষকরা জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে চাল, বাদাম ও ভুট্টার ৬০টি নমুনার মধ্যে ৯টিতে লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে বাদাম ও ভুট্টাতেই এর উপস্থিতি বেশি। অন্যদিকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লইট্টা শুঁটকিতে ক্ষতিকর ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে। কিছু অঞ্চলে গরুর দুধে সামান্য পরিমাণে অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে অরেঞ্জ নলেজ প্রোগ্রামের অধীনে পাঁচটি আলাদা গবেষণায় এসব ফলাফল উঠে এসেছে। ২০২১ সালজুড়ে গবেষণাগুলো পরিচালিত হয়।

খাদ্যশস্যে লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী অ্যাফ্লাটক্সিন নামক উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী। গবেষণায় আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল, বাদাম, আটা, ভুট্টা, মসুর ডাল, মুগ ডাল ও সরিষায় বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের পরীক্ষা করা হয়। গত বছরজুড়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ঈশ্বরদী, নাটোর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়ের গুদাম ও পাইকারি বাজার থেকে মোট ৬০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণা অনুসারে, সংগৃহীত নমুনার ৯টিতে অ্যাফ্লাটক্সিন পাওয়া গেছে। এসবের চারটিতে ছিল নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। তবে বাদাম ও ভুট্টাতেই এর উপস্থিতি বেশি। চালের একটি নমুনাতেও তা পাওয়া গেছে। গবেষক তাজুল ইসলাম বলেন, অ্যাফ্লাটক্সিন আদর্শসীমার মধ্যে থাকলে তা তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে মাত্রাতিরিক্ত হলে সেটি ক্যান্সার ও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।

সালাদ তৈরির সবজি ও দুগ্ধজাত খাবারে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিয়ে আরেকটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম। তাঁর গবেষণায় শসা, টমেটো ও গাজরের ৮৫টি ও দুগ্ধজাত পণ্য আইসক্রিম, দই ও পনিরের ৮৩টি নমুনা ব্যবহূত হয়। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, সদর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে এসব গবেষণার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণায় নমুনার ১৯ শতাংশ শসা, ১০ শতাংশ টমেটো ও ৩ শতাংশ গাজরে এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে ৭ শতাংশ আইসক্রিমে ও ৪ শতাংশ দইয়ে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাকটেরিয়া মূলত শৌচাগার থেকে মানুষের হাত ও মাটির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, দুগ্ধজাত পণ্যে এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সবজি পরিস্কার ও সেদ্ধ করে খেলে এ ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। কিন্তু দই, আইসক্রিম তো ধুয়ে খাওয়া যায় না। এ ব্যাকটেরিয়া মানুষের জ্বর ও পেটের অসুখ, শরীর ব্যথা, মেয়েদের বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক শাহেদ রেজা ক্ষতিকর ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া খুঁজতে মূলত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অঞ্চলের কাঁচা লইট্টা, আধা ও পুরোপুরি শুকনো লইট্টা শুঁটকি পরীক্ষা করেন। সেখানে শতভাগ লইট্টার নমুনাতেই এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। তার গবেষণায় ৪৫টি নমুনার ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ সৃষ্টিকারী এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। আর ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে।

শাহেদ রেজা বলেন, শুঁটকি ধোয়ার পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকলে, শুঁটকি ভালো করে না শুকানো হলে ও বেশি তাপমাত্রায় রান্না না করলে তা পেটে গেলে শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের স্থান, গুদাম, শুঁটকির বস্তায়ও এ ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়াটি পাওয়া গেছে। কিছু অঞ্চলে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লইট্টা সেদ্ধ করা হয় না, তাই সেখানে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি থাকে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মনজুর মোরশেদ আহমেদ অন্য একটি গবেষণায় সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার জন্য মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় বাজারের খুচরা বিক্রেতা এবং পাবনা ও সিরাজগঞ্জের দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র ও খামার থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।

তাঁর গবেষণা অনুসারে, সংগৃহীত ২০০ নমুনার মধ্যে ৬টিতে অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। তবে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন পাওয়া যায়নি। মূলত গরুর স্তনপ্রদাহের চিকিৎসার জন্য গরুর শরীরে এসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। যেসব কৃষকের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তাঁদের ৭০ শতাংশই দুধ ও মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশের বিষয়টি জানেন না। ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষক নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন।

কেডি