বুধবার ২৯ নভেম্বর ২০২৩

| ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৭:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

মহানগর ডেস্ক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘ভাই আটক’—কে এই আরসা প্রধান আতাউল্লাহ

প্রকাশের সময়: ১৭:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

মহানগর ডেস্ক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘ভাই আটক’—কে এই আরসা প্রধান আতাউল্লাহ

আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাই মো. শাহ আলীর আটকের খবরে আরেকবার সামনে চলে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে আলোচিত আতাউল্লাহ’র নাম। ইনি সেই আতাউল্লাহ, যার পরিচিতি মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান হিসেবে।

সাম্প্রতিক সময়ে এদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে হত্যাকাণ্ড ও অস্থিরতার জন্য এই আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকেই দায়ী করছেন নিহতের স্বজনেরা। তবে সরকারের মতে, বাংলাদেশে আরসার অস্তিত্ব নেই।

দেশে আরসার অস্তিত্বের বিতর্কের মধ্যেই রোববার (১৬ জানুয়ারি) ভোরে উখিয়ার ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৌকার মাঠ এলাকা থেকে আতাউল্লাহ’র ভাই মো. শাহ আলীকে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করেছেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) সদস্যরা।

এরআগে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নেতা মুহিবুল্লাহ ব্রাশফায়ারে নিহত হন। মুহিবুল্লাহ হত্যায় আরসার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

কে এই আতাউল্লাহ

তার পুরো নাম আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। তবে আতাউল্লাহ বা আতা উল্লাহ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এই নেতাকে অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, আতাউল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন পাকিস্তানের করাচিতে। তার পরিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তানে পালিয়ে আসে।

মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আতাউল্লাহ’র জন্ম করাচিতে হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন সৌদি আরবে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’ তাদের এক রিপোর্টে বলছে, আরসা মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা।

মক্কায় থাকে এমন বিশ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি গড়ে তোলে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে এদের যোগাযোগ রয়েছে।

ইউটিউবে আতাউল্লাহ’র একটি ভিডিও থেকে ধারণা করা হয়, রাখাইনের রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে সেটি এবং আরবী, এই দুটি ভাষাই তিনি অনর্গল বলতে পারেন।

২০১২ সালে আতাউল্লাহ সৌদি আরব থেকে ‘অদৃশ্য’ হয়ে যান। এরপর আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তার নাম শোনা যায়।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে (যদিও নিশ্চিত করা যায়নি), তিনি পাকিস্তানে বা অন্য কোথাও গিয়েছিলেন, এরকম কিছু আলামত রয়েছে, সেইসঙ্গে তিনি আধুনিক গেরিলা রণকৌশলের প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। এই বিদ্রোহী দলের কয়েকজন সদস্য আইসিজি-কে এও বলেছেন যে, রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের আগে তিনি লিবিয়াতে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে থাকতে পারেন, কিন্তু তার সম্পর্কে অন্য বিষয়গুলো অনিশ্চিত।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আতাউল্লাহ শত শত বিদ্রোহীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে একটি পুলিশ পোস্টে হামলা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সপ্তাহ পরে, এক অনলাইন ভিডিওতে আতাউল্লাহকে ওই হামলার দায় স্বীকার করতে শোনা যায়।

এছাড়া গত বছর রোহিঙ্গা কুতুপালং ক্যাম্পে ব্রাশফায়ারে নিহত হন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নেতা মুহিবুল্লাহ। আরসার সহযোগিতায় নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের বলি হতে পারেন মুহিবুল্লাহ, এমনটাই সন্দেহ রোহিঙ্গা নেতাদের।

যেভাবে আটক শাহ আলী

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু জুনুনির ভাই শাহ আলীকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ টাকা ও মাদকসহ কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তাকে আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি নাঈমুল হক।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি নাঈমুল হক বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু জুনুনি। গোয়েন্দা তথ্যে আতাউল্লাহর ভাইয়ের ক্যাম্পে অবস্থানের বিষয়টি জানা যায়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তবে ভাইয়ের মতো আটক শাহ আলী আরসার সঙ্গে জড়িত কি-না, নিশ্চিত করতে না পারলেও ভাইয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছে এপিবিএন।

মহানগরনিউজ/এমএন