সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৭:৫২, ২৭ জুলাই ২০২২

আসিফ পিনন

এবার রেলের জিএমকে ট্রেনে রেখে বিকল সেই ‘কোটি টাকার ইঞ্জিন’—পরপর দু’দিন

প্রকাশের সময়: ১৭:৫২, ২৭ জুলাই ২০২২

আসিফ পিনন

এবার রেলের জিএমকে ট্রেনে রেখে বিকল সেই ‘কোটি  টাকার ইঞ্জিন’—পরপর দু’দিন

তিন হাজার হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন। কোটি টাকার এ ইঞ্জিন যুক্ত হলে দ্রুত ট্রেন পৌঁছে যাবে গন্তব্যে, আধুনিক ইঞ্জিনে স্বস্তি মিলবে চালকেরও— যাত্রীদের এমন গল্প শুনিয়ে আনা ‘৩০০০ সিরিজের’ সেই লোকোমোটিভ যাত্রাপথে হরহামেশা বিকল হয়ে পড়ছে। এবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন ও প্রায় এক ডজন রেলওয়ে কর্মকর্তাদের নিয়ে বিকল হয়ে গেল ট্রেনের সেই ৩০০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন। পরে ট্রেনটির গন্তব্যে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। 

ইঞ্জিন বিকলের এ ঘটনা একদিন নয়, ঘটল পরপর দু’দিন।

এমন বাস্তবতায় সমালোচিত সেই কোটি টাকার ইঞ্জিন নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। চলতিপথে যাত্রী নিয়ে একের পর এক ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ার ঘটনায় গণমাধ্যমে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি রেলওয়ের যান্ত্রিক, বাণিজ্যিক ও পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে যাত্রাপথে ট্রেনে এ ধরনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। 

জানা যায়, মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়ে চাঁদপুর সফর শেষে ফেরার পথে হাজীগঞ্জে হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে সাগরিকা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন (ইঞ্জিন নং-৩০০৫)। পরদিন ৩০০৬ নম্বর ইঞ্জিনটি সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে যাচ্ছিল চাঁদপুর। সেই ইঞ্জিনও বিকল হয়ে পড়ে মাঝপথে। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় এক ডজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম হয়ে চাঁদপুর সফরে যান জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন। এসময় সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ৩০০৫ সিরিজের ইঞ্জিনটি। চট্টগ্রাম থেকে ‘ভালোভাবে’ চাঁদপুর যাওয়া গেলেও ফিরতি পথে হাজীগঞ্জ স্টেশনে বিকল হয়ে যায় ইঞ্জিনটি। পরে অন্য স্টেশন থেকে একটি ইঞ্জিন পাঠিয়ে জিএম ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বহনকারী সেই ট্রেনটিকে ‘উদ্ধার’ করা হয়। 

এ যাত্রায় জিএমের সঙ্গে ছিলেন প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইই) সুজন চৌধুরী, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিমসহ পূর্বাঞ্চলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পরে ট্রেনটি চট্টগ্রাম পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। 

একইভাবে বুধবার (২৬ জুলাই) যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর যাওয়ার পথে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিকল হয়ে পড়ে লাকসামে। এতে প্রায় একঘণ্টা লাকসাম স্টেশনে আটকে থাকেন যাত্রীরা। এসময় রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লোকো মিস্ত্রি মহানগরনিউজকে বলেন, চালুর পর থেকে ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিনগুলো বারবার বিকল হয়ে পড়ছে। ইদানীং তা বেড়েছে। মঙ্গলবার এবং বুধবার ভ্যাকুয়াম সমস্যার কারণে ৩০০৫ এবং ৩০০৬ ইঞ্জিন দু’টি বিকল হয়ে পড়ে। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বহুল আলোচিত ৩০০০ সিরিজের কোটি টাকার নতুন ইঞ্জিন যাত্রাপথে বিকল হয়ে পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। চট্টগ্রাম-ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করতে গিয়ে এরআগেও একাধিকবার ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে। 

সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ‘রাজকীয়’ ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ৩০১৬ সিরিয়ালের ইঞ্জিনটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। এসময় যাত্রাপথে প্রায় দেড়ঘণ্টা আটকে ছিল ট্রেনটি। 

এরআগে ২৫ ফেব্রুয়ারি সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩০১১ সিরিজের ইঞ্জিনটি যাত্রাপথে বিকল হয়ে পড়ে। যাত্রাপথে এভাবে একের পর এক নতুন ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় ভোগান্তি ও অসন্তোষ বাড়ছে যাত্রীদের মধ্যে। 

এদিকে যাত্রাপথে ইঞ্জিন বিকলের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন মহানগরনিউজকে বলেন, ভ্যাকুয়াম সমস্যার কারণে গতকাল (মঙ্গলবার) ইঞ্জিনে সমস্যা হয়েছে। 

একইভাবে বুধবারও ইঞ্জিন বিকলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সংশ্লিষ্ট দপ্তর দেখভাল করছে। ওনারাই বিস্তারিত বলতে পারবেন।

নতুন ইঞ্জিন বারবার বিকলের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে ফোনকল রিসিভ করেননি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ডিএমই) ওয়াহিদুর রহমান। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি। 

জেডএইচ