মঙ্গলবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩

| ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৬:০১, ২৫ মার্চ ২০২৩

মহানগর ডেস্ক

মুঘল বিজয়ের স্মারক ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ’

প্রকাশের সময়: ১৬:০১, ২৫ মার্চ ২০২৩

মহানগর ডেস্ক

মুঘল বিজয়ের স্মারক ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ’

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ

গর্ব করার মতো বাংলাদেশের আছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ স্থাপত্যকলা। বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত ভ্রমণচারী ও মননশীল মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক অন্যতম স্থাপত্য আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সদরে নির্মিত এই এ মসজিদটি ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস ও মোগল সাম্রাজ্যের অনন্য নিদর্শন।

জানা যায়, ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের তৎকালীন মোগল শাসনকর্তা সুবেদার নবাব শায়েস্তা খাঁর পুত্র উমেদ খাঁ মগ ও পর্তুগিজদের একটি আস্তানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে এর নামকরণ করা হয় ‘আন্দরকিল্লা’।

যুদ্ধ বিজয়ের স্মারক হিসেবে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেব চট্টগ্রামের নতুন নামকরণ করেন ইসলামাবাদ। তারই নির্দেশে চট্টগ্রাম বিজয়ের মোগল স্মারক চিহ্ন হিসেবে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ সালে ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ’ নির্মাণ করেন। দিল্লি’র এক ঐতিহাসিক জামে মসজিদের অবয়বে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

সমতল ভূমি থেকে প্রায় ত্রিশ ফুট ওপরে ছোট্ট পাহাড়ের ওপর মসজিদটির অবস্থান। মূল মসজিদের নকশা অনুযায়ী, আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ ১৮ গজ (১৬ মিটার) দীর্ঘ, ৭ দশমিক ৫ গজ প্রস্থ। প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২ দশমিক ৫ গজ পুরু। পশ্চিমের দেয়াল পোড়া মাটি এবং বাকি তিনটি দেয়াল পাথর দিয়ে তৈরি। মধ্যস্থলে একটি বড় এবং দুটি ছোট গম্বুজ দ্বারা ছাদ আবৃত। 

১৬৬৬ সালে নির্মিত মসজিদের চারটি অষ্টভুজাকৃতির গম্বুজগুলোর মধ্যে পেছন দিকের দুটি এখনো বিদ্যমান রয়েছে। মসজিদটির পূর্বে তিনটি, উত্তর এবং দক্ষিণে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদটিতে তিনটি মেহরাব থাকলেও সাধারণত মাঝের সর্ববৃহৎ মেহরাবটিই বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মসজিদটির নকশার সঙ্গে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের অনেক মিল। দিল্লি জামে মসজিদের আদলে বড় বড় পাথর ব্যবহার করে নির্মিত বলে এই মসজিদকে পাথরের মসজিদ, জামে সঙিন মসজিদও বলা হয়।

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ নির্মাণের প্রায় ৫৬ বছর পর অর্থাৎ ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে আরেক শাসনকর্তা নবাব ইয়াসিন খাঁ মসজিদের সন্নিকটের পাদদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি টিলার ওপর আরেকটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করেন। যার নামকরণ করা হয় ‘কদম রসুল’। এক সময় আন্দরকিল্লা মসজিদের চেয়ে কদম রসুল মসজিদটি বেশ জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। যার কারণে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মুসল্লিদের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এক পর্যায়ে মসজিদটি লোকশূন্য হয়ে পড়লে এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটিকে তাদের গোলাবারুদ রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৮৮৫ সালে নবাব হামিদুল্লাহ খাঁর বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর ১৬৬৭ সাল থেকে এ মসজিদ ঘিরে চট্টগ্রামের ইসলামি ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপক আনাগোনা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মহানবীর বংশধররা (আওলাদে রাসুলরা) এ মসজিদের খতিব হিসেবে নিযুক্ত হতেন। যার ধারাবাহিকতা এখনো রয়েছে। বর্তমানে এ মসজিদটির খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওলাদে রাসুল সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবেরি আল মাদানি এবং নিয়মিত ইমামতি করছেন ৩ জন ইমাম, ২ জন মুয়াজ্জিন ও ৭ জন খাদেম।

মসজিদটির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মসজিদে প্রতিদিন অন্তত ৪ হাজার মুসল্লি নিয়মিত নামাজ আদায় করতে পারার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। মসজিদে প্রতি শুক্রবার একত্রে গড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করেন। পবিত্র রমজান মাসের জুমআতুল বিদায় ২০ থেকে ২৩ হাজার মানুষের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার নজিরও রয়েছে।

প্রতি বছর পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম রোজা থেকে শেষ রোজা পর্যন্ত এই মসজিদে নগরের বিত্তবান শিল্পপতিদের অনুদানে ২ থেকে ৩ হাজার মানুষের জন্য বিশাল ইফতারের আয়োজন করা হয়। ইফতার আয়োজনে অংশ নিতে বিভিন্ন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন শত শত মানুষ।  রমজানে মসজিদের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মুসলমান রোজাদার ব্যক্তিরা ছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মানুষরাও ইফতারে শরিক হন। 

তাদের মতে, এই মসজিদে ইফতার গ্রহণ করলে সুফল লাভ করা যায়। প্রায় এক দশক আগে শুরু হওয়া মসজিদের বিশাল এ ইফতার আয়োজনে আর্থিকভাবে যারা সহযোগিতা করেন তাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রামের শিল্পপতি। তবে তাদের অনুরোধেই এত বড় আয়োজনে তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না।

এসএ