
‘ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার কারণে লিভারের প্রদাহের নাম হলো ন্যাশ (নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস)। ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল। স্থুলতা বা মোটা হওয়া, যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা এবং ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস- এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।’
চট্টগ্রাম নগরীর রেডিসন ব্লুতে ‘আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে লিভার কেয়ার সোসাইটি আয়োজিত ‘স্টপ ন্যাশ নাউ’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে ইদানীং জনপ্রিয় ফাস্ট-ফুড কালচার ফ্যাটি লিভারের বাড়তি প্রাদুর্ভাবের অন্যতম কারণ। এছাড়া যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপোথাইরয়েডিজম, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি বা ডিজলিপিডেমিয়া, হেপাটাইটিস সি এবং মহিলাদের মধ্যে যারা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে ভুগছেন, তারাও ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন। কর্টিকোস্টেরয়েড, টেমক্সিফেন ইত্যাদি ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। রোগটির পরিচিতি নতুন হলেও বিশ্বব্যাপী এই ন্যাশ এখন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশেও একইভাবে বিস্তার ঘটছে ন্যাশের।
ডা. মেহেরুন্নেসা খানমের উপস্থাপনায় সিম্পোজিয়ামে নিজেদের প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন চমেক হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও লিভার কেয়ার সোসাইটির সভাপতি ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, চমেক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহানা আক্তার, পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নিল)।
ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ন্যাশ রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ পরবর্তী সময়ে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন। আর তাদের মধ্যে কারও কারও লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। তবে এটি লিভারের রোগ হলেও বেশীরভাগ রোগী মারা যান হৃদরোগ, স্ট্রোক কিংবা কিডনি জটিলতায়।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ন্যাশ চিকিৎসায় এখনও শতভাগ কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। এর সবচাইতে কার্যকর চিকিৎসা ‘লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন’ ও জনসচেতনতা। আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে নিয়ে দেশব্যাপী ন্যাশ প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে।
ডা. ফারহানা আক্তার ন্যাশ প্রতিরোধে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার, স্থুলতা ও অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডিজলিপিডেমিয়া এবং হরমোন রোগের চিকিৎসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি বলেন, ন্যাশ প্রতিরোধে নিয়মিত হাঁটা ও শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের বেশি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং শিশুদের জন্য খেলার মাঠ বাড়ানো জরুরি। এছাড়া, শিশুদের ফাস্ট ফুডের অভ্যাস পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের হেড অব রিসার্চ অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান ও বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। এছাড়া বিশেষজ্ঞ প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইপারটেনশন এন্ড হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ, চমেক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এরশাদ উদ্দীন আহমেদ, চমেক নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোঃ নুরুল হুদা, চমেক হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আলোক কুমার রাহা ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দীন শাহেদ চৌধুরী।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, লিভার কেয়ার সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ ও এপিক হেলথ কেয়ারের সিওও ডা. মো. এনামুল হক, অপারেশন্স ম্যানেজার ডা. হামিদ হোছাইন আজাদ, এসআরএল ডায়াগনস্টিক চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রবিউল আলমসহ প্রায় শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
পরে অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন সিম্পোজিয়ামের চেয়ারপার্সন, লিভার কেয়ার সোসাইটির সহসভাপতি ও পরিচালক (এমআইএস), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন।
জেডএইচ