সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
০৪:৫৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা : ঘুরছে ওমিক্রন, বিপদ বাড়াচ্ছে ডেল্টা

প্রকাশের সময়: ০৪:৫৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা : ঘুরছে ওমিক্রন, বিপদ বাড়াচ্ছে ডেল্টা

করোনা পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে মানুষ (ফাইল ছবি)

চট্টগ্রামে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩৮ জন। সংক্রমণের হার ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ সময় নতুন করে কারও মৃত্যু হয়নি। চট্টগ্রামে ১৩টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ১১৭টি নমুনা পরীক্ষা করা  হয়। ১৮ জানুয়ারি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

নতুন আক্রান্ত ৬৪৭ জন নগরের ও ৯১ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫৭ জন। এর মধ্যে নগরে ৭৭ হাজার ৪৩৮ জন এবং উপজেলায় ২৯ হাজার ৯১ জন। এছাড়া মোট মৃত্যুবরণ করা ১ হাজার ৩৪০ জনের মধ্যে ৭২৬ জন নগর এবং ৬১৪ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মোট সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২৬২৪ আর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৮ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজারের কাছাকাছি।

চিকিৎসকরা বলছেন, এতো রোগী আগে বাড়তে দেখা যায়নি। চট্টগ্রামে ওমিক্রনে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে বলে সন্দেহ চিকিৎসকদের। একই সঙ্গে প্রাণঘাতী ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টাও সক্রিয় রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের টিকা নেওয়া ছিল না।  ১৭ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে বুস্টার দেওয়া শুরু হয়ে গেছে

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এই সময় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশ করোনার টিকা নেননি। বাকি ২০ শতাংশ নানা ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তবে এখনও কোনো ব্যক্তি ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কি না, সে তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই। জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে ১৪-১৫ দিন সময় লাগে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধি অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকায় ওমিক্রনের সংক্রমণ বেশি। তবে অন্যান্য জেলায় এখনও ডেল্টার সংক্রমণ অব্যাহত আছে।

চট্টগ্রামে নতুন বছরের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৩ জানুয়ারি শনাক্ত হয়েছে ২৬০ জনের। সংক্রমণ বৃদ্ধির হারও উদ্বেগজনক। ১ জানুয়ারি ১ হাজার ৪৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ৯ জনের। শনাক্তের হার ০.৬০ শতাংশ। ১১ দিনের ব্যবধানে (১২ জানুয়ারি) শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। ১ হাজার ৭৯০ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ২২২ জনের। শনাক্তের হার ১২.৪০ শতাংশ। পরদিন (১৩ জানুয়ারি) শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ জনে। শনাক্তের হারও ১০ শতাংশের বেশি। ১৪ জানুয়ারি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৯৬ জন। ১৫ জানুয়ারি ২৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৬ জানুয়ারি ৫৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৭ জানুয়ানি করোনা শনাক্ত হয় ৭৪২ জনের।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে ক্ষতি কম হয় ভেবে আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন ওমিক্রন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রিপ্লেস করেছে, বাংলাদেশেও হয়তো এক সময় সেটি হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সংস্থাটির মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সারা পৃথিবীতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। প্রতিটি দেশেই সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি আমরা দেখছি। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। গত ১ সপ্তাহে বাংলাদেশে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩০৫টি পরীক্ষা করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনা ৪৮ হাজার ১৯২টি বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে ২২২ শতাংশ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ১ সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে শতকরা ৬১ শতাংশ।

ভ্যাকসিন নিতে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রচণ্ড ভিড়

আশার কথা হচ্ছে, শনাক্ত ১০০ জন রোগীর মধ্যে ৯৬ শতাংশের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা অতিমারির মধ্যে গত ২ বছর আমরা যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি, বিশেষ করে গত বছর ডেল্টা দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কাটিকে আমরা চেষ্টা করে সামলেছি অথবা সামলানোর চেষ্টা করেছি। সেই ধাক্কার পরবর্তী বিষয় কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে।

আমাদের অনেকেরই একটি ধারণা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনও হয়তো ওমিক্রন—যে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি ধরা পড়েছে তাতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু ভয়াবহ কিছু নয়। এটি কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে একেবারে নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি। আমাদের ধরে নিতে হবে বাংলাদেশে এখনও মূলত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করছে। ওমিক্রমনে সংক্রমণ ঘটেছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন ওমিক্রন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রিপ্লেস করেছে, বাংলাদেশেও হয়তো এক সময় সেটি হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো জায়গা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই, বলেন তিনি।

নাজমুল আরও বলেন, টিকা পেতে যত মানুষ নিবন্ধন করেছেন, তত মানুষ টিকা গ্রহণ করেননি। ওমিক্রনে ক্ষতি কম হয় ভেবে আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। যে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চেষ্টা করছি, সেটাকে যদি আগামী দিনগুলোতে বজায় রাখতে চাই তাহলে অবশ্যই আমদের গত বছর যে সতর্কতা দেখিয়েছিলাম, সে ধরনের সতর্কতা প্রকাশ করতে হবে।

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি চিকিৎসক ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম জানিয়েছেন প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইউকেতে করোনা সংক্রমণ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। এই সময়টিতে মৃত্যু বাড়তে থাকলেও আগামী এক সপ্তাহের ভেতরেই তা আবার কমে যাবে। 

মিউটেশনের মাধ্যমে ওমিক্রনের চেয়েও যদি কোন ‘ফিট’ ভাইরাসের উদয় হয় তবে তা হবে একেবারেই ঠান্ডা সর্দি জ্বরের ভাইরাসের মত। ভাইরাসের লক্ষ্য মানুষকে মেরে ফেলা নয়, জৈব বিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী নতুন একটি ভাইরাস সব সময় চায় বংশ বৃদ্ধি করতে। যাকে ভর করে ভাইরাসটি বংশ বৃদ্ধি করবে। এই কারণেই মিউটেশনের মাধ্যমে ভাইরাস এমন একটা পর্যায়ে থাকতে চায় যখন তা সংক্রমণও করবে কিন্তু তার হোস্টকে মেরে ফেলবে না। এটাই হল ভাইরাসের ফিটনেস।

করোনা সংক্রমণ বাড়লেও মানুষ অসতর্কভাবে চলাফেরা করছে ছবি- আজীম অনন

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার উপসর্গ হিসেবে সামান্য জ্বর-সর্দি দেখা দিচ্ছে। যা ৩/৪ দিনের ব্যবধানে আবার সেরেও যাচ্ছে। এ ধরনের মৃদু উপসর্গ থাকলেও অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। তারা এটিকে স্বাভাবিক সর্দি-জ্বর মনে করছেন। তবে যারা করোনা টেস্ট করাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগেরই করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে শনাক্তের সংখ্যাও আরও বাড়বে। 

মূলত, রোগীর ওমিক্রন শনাক্ত করতে হলে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করতে হয়। বর্তমানে ওমিক্রন সন্দেহ হলে রোগীর নমুনা পাঠাতে হচ্ছে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব অ্যাপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ-এ (আইইডিসিআর)। কিন্তু ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘসময়। অথচ জিনোম সিকোয়েন্স  করা গেলে চট্টগ্রামে  ওমিক্রন আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্ত করা যেত।

করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন গবেষকরা। তবে বিভিন্ন জটিলতায় ওমিক্রন শনাক্তে কাজ করতে পারছেন না বলে জানান চট্টগ্রামের গবেষকরা।

কেডি