
রমজানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির আশায় আবাসিক হল ছাড়েনি অনেক নেতাকর্মী। আশা একটায়- চলতি মাসেই পূর্ণাঙ্গ হবে দুই সদস্যের দীর্ঘদিনের অপূর্ণাঙ্গ কমিটি। রমজানের শুরুতেই একই আভাস দিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। এমনকী এ বিষয়ে আগে থেকেই সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে নেতাকর্মীদের মাঝে ফের দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও হতাশা। কারণ কমিটিতে পদের ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে বোঝাপড়ার ইস্যুতে চলতি মাসে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে দোলাচলে রয়েছেন নেতারা।
চবি ছাত্রলীগের সূত্র জানায়, দুই নেতার অনুসারীদের দ্বারা চবি ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত। একটি পক্ষ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নিয়ন্ত্রিত। অন্যটি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নিয়ন্ত্রিত। তবে উভয়পক্ষের মধ্যে রয়েছে একাধিক গ্রুপ ও উপগ্রুপ। সর্বশেষ চবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি হয় ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। এর মধ্যে সভাপতি রেজাউল হক রুবেল শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারী। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
এর আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদের আশায় চবি ছাত্রলীগ থেকে ১৪০০ জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে কেন্দ্রীয় সেলে। এমনকি চবিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতা এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে এর মধ্যে একাধিকবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ। তবে এবার ২০১ সদস্যের কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও তা বেড়ে ২৬১ সদস্য বিশিষ্ট হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে চলতি মাসে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের মাঝে বেশ তৎপরতা দেখা গেছে। গত ১২ এপ্রিল রাতে নগরীতে গোপন বৈঠক করে আ জ ম নাছির অনুসারীর আটটি গ্রুপ। ওই বৈঠকের আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ বোঝাপড়া চলে সবকটি গ্রুপ উপ-গ্রুপের মধ্যে। প্রতিটি গ্রুপ থেকে নেতাকর্মীদের নামের লিস্টও জমা নেওয়া হয় ওই গোপন বৈঠকে।
অন্যদিকে নওফেল অনুসারীর পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে এখনও পাওয়া যায়নি কোনো ইতিবাচক সাড়া। এই পক্ষের দুইটি গ্রুপ বিদ্যমান থাকলেও পদের ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি তাদের। তবে এই পক্ষের নেতাদের ভাষ্য, শিক্ষা উপমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে। তিনি দেশে ফিরলেই উভয়পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চবি ছাত্রলীগের একপক্ষের এক নেতা বলেন, প্রায় তিন বছর পর চবি ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে। সেই আশায় নেতাকর্মীরা হলে অবস্থান করছে এখনও। ঈদের আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে ভালো হয়।
চবি ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন টিপু মহানগর নিউজকে বলেন, ঈদের আগে কমিটি গঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। আমরা দুই চারদিনের ভেতরে কেন্দ্রে যাব। একজনের জন্য কমিটি আটকে থাকবে না, আমরা ঈদের আগে কমিটি করে ফেলার পক্ষে। কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করছি।
তবে এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের নেতা মো. ইলিয়াস মহানগর নিউজকে বলেন, সভাপতি ও সেক্রেটারির আন্তরিকতার অভাবে এত বছরেও কমিটি হয়নি। তারা চলতি মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা দিয়েছেন। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো লিস্ট জমা দেওয়া হয়নি। আমাদের নেতা শিক্ষা উপমন্ত্রী বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে আসলে কাল বা পরশু আমরা বসব। ওনাকে নেতাকর্মীদের চাওয়া পাওয়াগুলো জানাবো। সেখানে সবকিছুর ফয়সালা হবে।
চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল মহানগর নিউজকে বলেন, আমাদের কমিটির লিস্ট তৈরি আছে। ছাত্রলীগের একজন নেতা সব নেতাকর্মীদের প্রতিনিধি হতে পারে না। আমাদের নেতা দেশে ফিরলেই আমরা কথা বলে পূর্ণাঙ্গ লিস্ট কেন্দ্রে জমা দিব। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সেটা যাচাই বাছাই করবে। আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও চবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শেখ নাজমুল আহমেদ মহানগর নিউজকে বলেন, আমরা চবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বলেছি ঈদের আগে কমিটি লিস্ট আমাদের হাতে দেওয়া জন্য। আমরা লিস্ট পেলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়ে দিব।
একইভাবে অভিযোগের সুর পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতুর বক্তব্যেও। তিনি মহানগর নিউজকে বলেন, আমরা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করছি। তবে ওনারা যদি ঈদের আগের দিন রাতে কমিটির লিস্ট নিয়ে আমরা যাচাই বাছাই না করে কীভাবে কমিটি দিব? ওনারা তাড়াতাড়ি লিস্ট নিয়ে আসলে আমরা কমিটি তাড়াতাড়ি দিতে পারবো।
এসএ