
নিজেকে কখনো পরিচয় দিতেন মন্ত্রীর আত্মীয়, কখনো বিদেশি জাহাজের মালিক। আর সেই কোটি টাকার বিদেশি জাহাজের স্ক্র্যাপ বিক্রি করার ভুয়া তথ্য দিয়ে মানুষকে লগ্নি করার কথা বলে হাতিয়ে নিতেন কোটি টাকা। আবার অন্যের জমি নিজের বলে ভুয়া দলিল দেখিয়েও একাধিক লোকের কাছে বিক্রি করতেন তিনি। এভাবে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে গত কয়েক বছরে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক’শ কোটি টাকা।
সেই প্রতারকের নাম মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪৬)। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কাটিয়াহাট এলাকার আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চটগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।
এর আগে রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, ২০১৫ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য শত কোটি টাকার একটি পুরোনো জাহাজ আনে খাজা শিপইয়ার্ড। এই জাহাজটিসহ এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। কেউ খবর নিতে গেলে যেন তার পক্ষে তথ্য দেয় এমন ২০/২৫ জন লোককে মাসিক বেতন দিয়ে নিয়োগ দেয় মেজবাহ। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে গেলে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকেরা তার ব্যবসার সব তথ্য ঠিক বলে জানাতো। এভাবে সে আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইব্রাহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কর্নেল ইউসুফ আরও বলেন, মেজবাহ বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার দেখিয়ে প্রচার করে একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছে, যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকা জব্দ করেছে। এছাড়াও সে ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী মহোদয় এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভাগ দিতে হবে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শোনাত। এছাড়া একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে ভুক্তভোগীদের আগে থেকে রাখা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা দিয়ে নাজেহাল করতো। মিথ্যে মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতো না।
র্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ আরও বলেন, এমন অভিযোগের খবর পেয়ে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১০টায় নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যা ব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মেজবাহ প্রতারনার মাধ্যেমে সাধারণ মানুষ থেকে টাকা আত্নসাৎ করার কথা স্বীকার করেছে। ভুক্তভোগীরা সহজে যাতে খুঁজে না পান সেজন্য তিনি নিজ জেলার স্থায়ী ঠিকানায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতেন। তাকে যেন কেউ চিনতে না পারে এজন্য সে তার মাথায় হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করেছে। এছাড়া তার নামে ১১টি মামলায় সাজা এবং ১১টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঁচলাইশ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
আইসি/এসএ