
ছবি সংগৃহিত
ভয়াল ২৯ এপ্রিল। উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের এক নাম। ৩২ বছর পরেও এই দিনের কথা ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ। অনেকে স্বজন হারানোর কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন। ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ‘ম্যারি এন’ নামের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়। ভয়াল এ ঘটনার ৩২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সুরক্ষিত হয়নি উপকূল।
সেদিন মধ্যরাতে আঘাতহানা এ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মীরসরাই, সন্দ্বীপ এবং কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া ও পেকুয়াসহ উপকূলের ১৩টি উপজেলা। লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চারদিকে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই দ্বীপের ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনও অরক্ষিত। প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ দশমিক ৪৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। পরে সেটির দৈর্ঘ্য কমিয়ে ৮ কিলোমিটার করে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবারো পাঠানো হয়েছে।
পুরোপুরি সুরক্ষিত হয়ে উঠেনি চট্টগ্রাম শহরের সাথে লাগোয়া সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকা। বরং নিয়মিত বৃক্ষ নিধন ও সংস্কার বিহীন বেড়িবাঁধের কারণে বর্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ আবাহাওয়ায় আতঙ্কে এখনো নির্ঘুম রাত যাপন করেন স্থানীয়রা। এখানে যে বেড়িবাঁধ আছে সেটি ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ১৯ কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪ কি.মি. প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যারি এন’ তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আনোয়ারা উপকূল। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা আনোয়ারাকে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষায় উপকূলজুড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই উদ্যোগে স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরিতে সাগরের লবণাক্ত পানি ব্যবহারসহ নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়কের কাজ করছে। মিঠা পানির পরিবর্তে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করায় এসব ব্লকের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁশখালীর ৭টি ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে ছনুয়া ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় এখনও আতঙ্কের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন এখানকার আট গ্রামের মানুষ । গত বছরও ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ৮-১০ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
এসএ