
শাহী আকবরী জামে মসজিদ
চট্টগ্রামের বহুল পরিচিত শাহী আকবরী জামে মসজিদ। চট্টগ্রামের আনোয়ারার পশ্চিমচাল গ্রামে বখতিয়ার পাড়ায় এই ঐতিহাসিক মসজিদটি অবস্থিত।
জানা যায়, এক সময় মসজিদটিকে ছৈয়দ কুতুব মসজিদও বলা হতো। ছৈয়দ কুতুব ছিলেন চট্টগ্রামের শেষ মোগল নবাব মীর রেজা খানের পিতা। এছাড়া মুকিম নাজির মসজিদ নামেও রেকর্ডপত্রে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে বুইরগ্যা মসজিদ নামেও পরিচিত। হয়তো প্রাচীন কালের মসজিদ বলেই স্থানীয়রা আঞ্চলিক ভাষায় বুইরগ্যা মসজিদ নামই সম্বোধন করে থাকেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬৬০ সালের ১৬ মে ঢাকার নবাব শাহ সুজার আপন ভাই আওরঙ্গজেবের ভয়ে বাংলা ছেড়ে আরাকানের দেয়াঙ শহরে আশ্রয় নেন। এরপর ১০ জুন সরফসঙ্গীদের নিয়ে দেয়াঙে ঈদের নামাজ করেন তিনি। তবে দেয়াঙের কোন এলাকায় তিনি রমজানের ঈদের নামাজ আদায় করেন তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
তৎকালে দেয়াঙের পশ্চিমচাল এলাকায় বখতিয়ার গোত্রের বহু শিয়া মুসলিম পরিবার বসবাস করতেন। হয়তো শাহজাদা সুজা মুসলিম অধ্যুষিত এ এলাকায় সাময়িক আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। এ গ্রামে আগের থেকে একটি মসজিদ ছিল, সেই মসজিদেই তিনি ঈদের নামাজ আদায় করেন বলে ধারণা করা হয়। শাহাজাদা সুজা ১৬৬০ সালে আরাকানের রাজধানীতে পৌছানোর পূর্বে প্রায় ৩ মাস ১০ দিন দেয়াঙে অবস্থান করেন। হয়তো ওই সময়ে তিনি মসজিদটি পাকা করেন। তাঁরই পূর্বপুরুষ মোগল সম্রাট আকবরের স্মৃতি রক্ষার্থে মসজিদটি নামকরণ করেন আকবরী মসজিদ। মসজিদটিকে নির্মাণকালীন হাতে আঁকা একটি মানচিত্র রয়েছে। মানচিত্রে মসজিদটির নির্মাণ সাল উল্লেখ আছে। প্রথম দুটি সংখ্যা ১৬ স্পষ্ট হলেও পরের দুটি সংখ্যা অস্পষ্ট। তবে অনুমান করা হয়, ১৬৬০ সালেই হবে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তৎকালে আরাকানের অপর নাম রোসাঙ্গ শহর। সেই রোসাঙ্গ শহরের প্রসিদ্ধ বন্দর ছিল দেয়াঙ। গবেষক আবদুল আবদুল হক চৌধুরী বন্দরগ্রামে বসবাসরত খোট্টা গোত্র সম্পকে বর্ণনায় বলেছেন, খোট্টাদের আদিপুরুষ মোগল সৈনিক এবং তারা ভারতের বেনারসের বাসিন্দা। মোগল শাহাজাদা সুজার সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। তখন থেকে তারা বন্দর ও দোতাল পাডায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। এতে ধারণা করা হয়, পশ্চিমচাল গ্রামের বখতিয়ার পাডায় প্রাচীন আকবরী মসজিদটি শাহাজাদা সুজা কর্তৃক ১৬৬০ সালে নির্মিত হয়েছে। তার ৬ বছর পর ১৯৬৬ সালে মোগলরা চট্টগ্রাম বিজয় করে দেয়াঙ বন্দরসহ শঙ্খ নদীর উত্তর সীমানা পর্যন্ত দখল করেন। অর্থাৎ পুরো দেয়াঙ রাজ্য মোগলদের অধিকারে চলে আসে। মোগলদের ব্যয়ভার ও স্থানীয় মুসলিম বখতিয়ার বংশের জীবিত ভাতার ব্যবস্থা করেন। পর্ববতীতে ১৭৭৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওইা মসজিদের নামে বরাদ্দ করা ৮০ দ্রোণ সম্পদ হতে কিছু কাটছাট করে ৬৩ দ্রোণ ৭ কানি ৫ গন্ডা জমি পুনরায় লাখেরাজ হিসাবে বরাদ্দ দেন।
এসএ