
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় এ রকম ৩৫টি সুড়ঙ্গের খোঁজ মিলেছে
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবিরে ৩৫টি সুড়ঙ্গের খোঁজ মিলেছে। সুড়ঙ্গগুলো দিয়ে সহজেই যাতায়াত করা যায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশে। ১৮ জানুয়ারি সীমান্তের মিয়ানমার অংশে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলির পর শূন্যরেখায় কোনারপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই খোঁজ মেলে এসব সুড়ঙ্গের।
একাধিক সূত্রের দাবি, সীমান্তে সেদিন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির পর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় শূন্যরেখার ঘরগুলো। যদিও একটি সূত্রের মতে, আরএসওর সংঘর্ষটি হয়েছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে।
এক ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে তৈরি সুড়ঙ্গের আদলেই বানানো সেগুলো। সুড়ঙ্গ দেখে বোঝা যায়, সেগুলো বেশ পুরোনো। অধিকাংশ সুড়ঙ্গের দেয়ালে খোদাই করে ‘আরসা’র নাম লেখা। ফলে অনেকের ধারণা, সুড়ঙ্গগুলো আরসার যাতায়াতের গোপন পথ ও আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সুড়ঙ্গগুলো এমনভাবে বানানো যে দূর থেকে এসবের অস্তিত্ব টের পাওয়ার সুযোগ ছিল না। কংক্রিটের তৈরি প্রতিটি দেয়াল ১০ ইঞ্চি পুরু। সব কটিতে প্রচুর ছিদ্র। আক্রান্ত হওয়ার আগেই সংবাদ পাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। শূন্যরেখায় সুড়ঙ্গগুলোর ওপরেই বসবাস করছিল কয়েক হাজার রোহিঙ্গা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় সশস্ত্র দুটি পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্তে কিছুটা অস্থিরতা আছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিসহ কোনো বাহিনীরই সেখানে (শূন্যরেখায়) হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তাই প্রকৃত অবস্থা জানা যাচ্ছে না।
বুধবার তমব্রু বাজারে পৌঁছানোর আগেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ও আশপাশে দেখা যায় বেশ কিছু অস্থায়ী তাঁবু। আগের সপ্তাহে সংঘর্ষের পর শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে অস্থায়ী তাঁবুগুলোতে। রোহিঙ্গা শিশুদের রাস্তায় খেলতে দেখা যায়। অনেকেই নানা কাজে অবাধে যাতায়াত করছিল বাজারে।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ৬৩০টির মতো পরিবারের প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা তমব্রু শূন্যরেখায় অবস্থান নিয়েছিল। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) হিসাবে শূন্যরেখায় গত সপ্তাহে আগুন লাগানোর আগ পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরে ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। অগ্নিসংযোগের পর রোহিঙ্গারা শূন্যরেখা ছেড়ে কোনারপাড়া খাল পেরিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশে আশ্রয় নেয়। সেখানে হাজারের কম রোহিঙ্গার দেখা মিললেও স্থানীয় লোকজন জানান, সংঘর্ষের পর শূন্যরেখার প্রায় সব রোহিঙ্গাই পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। ৫০০ থেকে ৬০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে গেলেও তাদের আবার ফেরত পাঠানো হয়।
তারাই এখনো শূন্যরেখায় আছে। এর বাইরে আড়াই হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার হদিস নেই। একাধিক সূত্রের দাবি, তারা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে চলে গেছে।
কেডি