
ছেলেকে হারিয়ে কান্না যেন থামছেই না সাদেকের মা নূরজাহান বেগমের। থেমে থেমে চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন তিনি। নূরজাহান বেগমের চিৎকার আর বুক ফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তাকে সান্তনা দিতে আসা আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরাও নীরবে অশ্রু ফেলছেন।
বুধবার (৬ জুলাই ) বিকালে লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের সড়াই এলাকায় এসিডে দগ্ধ হয়ে নিহত ছাদেকের (২৩) বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যয়।
এর আগে গত ২৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়াস্থ মালেক মেম্বারের ইটভাটা এলাকায় প্রতিপক্ষের ছোড়া এসিডে দগ্ধ হন সাদেক। এরপর দীর্ঘ ৫দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সোমবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সাদেক উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সড়াইয়া বলির জুম এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে। দুই বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছাদেক। তার স্ত্রী নাছিমা আকতারের হাতের মেহেদীর রং এখনও শুকায়নি।
নিহতের মা নুরজাহান বেগম সদ্য বিবাহিত ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তার ছেলেকে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের আকুতি জানান তিনি।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে সাতকানিয়া থানায় দুজনকে আসামি করে মাললা দয়ের করেন নিহত সাদেকের বড় ভাই মো. শহাজাহান।
মামলায় মো. নিজাম উদ্দীন ও মো. পারভেজকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে বলে মহানগর নিউজকে নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মো. ছাদেক সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়বের কেরানীহাটস্থ পোল্ট্রি ফিডের দোকানে চাকরি করতেন। আবু তৈয়ব এবং তার প্রতিবেশি অ্যাডভোকেট নামিজ উদ্দিনের মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। গত ২৬ জুন আবু তৈয়ব তার ঘরের ছাদ ঢালাইয়ের সময় নাজিম উদ্দিনদের সাথে ঝামেলা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাদেক মালিকের পক্ষ হয়ে কথা বলেন।
এ জন্য নাজিম ছাদেককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে সাদেক দোকান বন্ধ করে মালিক তৈয়বের ঘরে ফিরছিলেন। এ সময় পূর্বে থেকে ওঁৎপেতে থাকা নাজিম ও তার সহযোগিরা ছাদেককে আটক করে মারধরের পর এসিড ছুড়ে মারে। এতে ছাদেকের শরীর ঝলসে যায়। তার আত্মচিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে এসিড নিক্ষেপকারীরা পালিয়ে যায়। এসিড নিক্ষেপকারীরা তার সাথে থাকা নগদ ৯৫ হাজার ৮২০ টাকা ও মোবাইল নিয়ে যায়।
পরে উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাতে মারা যায়।
পুটিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মহানগর নিউজকে বলেন, এসিডে দগ্ধ হয়ে সাদেক মারা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার তাকে দাফন করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এআই