
খাগড়াছড়ির রামগড়ে অবাধে চলছে টিলা-জমি কেটে মাটি পাচারের মহোৎসব। মাটি খেকো চক্র নির্বিচারে কাটছে পাহাড়, বনাঞ্চল ও ফসলি মাঠের জমি।
উপজেলার রামগড় এক নম্বর ইউনিয়ন ও পাতাছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান এবং পৌরসভার কয়েকটি স্থানে টিলা-জমি কাটার উৎসব চললেও এ অপতৎপরতা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের জোড়ালো কোন আইনি পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। মাঝে-মধ্যে দায়সারা অভিযান চালানো হলেও পরক্ষণেই শুরু হয় পুরোদমে ধ্বংসলীলা।
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অজুহাতে পুরো বছরব্যাপী টিলা-পাহাড় কেটে চলছে কয়েকটি মাটি খেকোচক্র। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিলা-পাহাড় কাটা ও অবৈধ বালু উত্তোলনের অপরাধে জরিমানা করলেও অল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও অপতৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে উঠে দুষ্ট চক্রগুলো। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ ধংসের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর না হওয়াকে দোষছেন এলাকীবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইটের ভাটায় প্রতিট্রাক মাটি বিক্রি করা হয় ২৫০০ টাকায়। বিক্রেতাদের ভাটা মালিকরা দেয় ১৮০০টাকা। বাকি টাকা প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করতে রাখা হয়। অনেকগুলো মাটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে এখানে। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যেকোনো সময় আরও বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনগণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চিনছড়ি পাড়ার ফুলকুমারি টিলা, বিড়ি কোম্পানির টিলা, ৫নং ওয়ার্ডের আদর্শপাড়ার জামালের টিলা, হকটিলা ও ৮নং ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার মন্নান কোম্পানির টিলায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
এছাড়াও উপজেলার পাতাছড়া, বলিপাড়া, বৈদ্যটিলা, কালাডেবা, সোনাইআগা, খাগড়াবিল, শ্মশানটিলা, নজিরটিলা, মুসলিমপাড়া, ব্রতচন্দ্রপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্টে নির্বিচারে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। আইন অমান্য করে এস্কেভেটর, কোদাল ও শাবল দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল ও লাল মাটির পাহাড় কাটা হচ্ছে। যার ফলে পাহাড়ের উপরের অংশ ন্যাড়া করে উজাড় করা হয়েছে গাছপালা। কোথাও খাড়া ভাবে, আবার কোথাও কাটা হচ্ছে আড়াআড়িভাবে। আর কিছু কাটা হচ্ছে উঁচু চূড়া থেকে। এভাবে বিভিন্ন কায়দায় কাটা হচ্ছে রামগড়ের বিভিন্ন টিলা। এসব মাটি সরকারি প্রকল্প, পুকুর ভরাট, রাস্তা সংস্কারসহ নানা স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক জানান, রামগড়-ফেনী সড়কসহ উপজেলার প্রতিটি অলি গলির রাস্তাগুলো যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বড় ট্রাক (ডাম্পার), মিনিট্রাক দিয়ে নষ্ট হচ্ছে সড়কগুলো। চরম জনদুর্ভোগের সম্মুখীন এখন সাধারণ মানুষ। প্রশাসনেরর সঠিক নজরদারির অভাবে অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আশিকুর রহমান সুমন বলেন,এভাবে পাহাড় কাটতে থাকলে রামগড়ে একটি পাহাড়ও থাকবেনা।ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে মানুষ।প্রতিবছর এমনিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
দলের নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন, কারও ব্যক্তিগত দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। যারা এ বেআইনি কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল কাউকে এসবে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবে না।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব কুমার কারবারী বলেল, ব্যাপক হারে পাহাড় কাটার খবর প্রতিনিয়ত পাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে পাহাড় ধসে জীবনহানির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন ।
পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল জানান, পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি উৎসবে পরিণত হয়েছে। মাটি বহনকারী ডাম্পার ও মিনি ট্রাকের বাড়তি ওজনে পৌর এলাকার রাস্তা ঘাট সংস্কার করেও লাভ হচ্ছে না। কয়েকদিন পরেই ভেঙে যায়।
এ প্রসঙ্গে রামগড় উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানস চন্দ্র দাশ বলেন, অবৈধভাবে টিলা কাটা কিংবা মাটি-বালু উত্তোলনের ঘটনা নজরে এলে বা অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
এআই