বৃহস্পতিবার ০৮ জুন ২০২৩

| ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
২০:০৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২২

শ্যামল রুদ্র, রামগড়

রামগড় প্রধান ডাকঘর

ডাকঘরে হিসাব খুলতে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে

প্রকাশের সময়: ২০:০৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২২

শ্যামল রুদ্র, রামগড়

ডাকঘরে হিসাব খুলতে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে

রামগড় প্রধান ডাকঘরে ইন্টারনেট সমস্যা কিংবা সার্ভার জটিলতার অজুহাতে গ্রাহকদের নতুন করে হিসাব খুলতে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। 

পোস্ট মাস্টার শহীদ কামাল আজাদ জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতার কারণে গ্রাহকেরা কাঙ্ক্ষিত সেবা লাভে বঞ্চিত হচ্ছেন। চলতি বছরে কোনো ধরনের নতুন হিসাব না খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও জানান, এখানে কম্পিউটারে কাজ করতে দক্ষ স্টাফ খুবই জরুরি। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সঞ্চয়পত্র, মেয়াদী ও সঞ্চয়ী হিসাব, বীমাপত্রসহ নতুন একাউন্ট খুলতে পারছেন না গ্রাহকেরা। অনেকেই নতুন হিসাব খুলতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। 

জানতে চাইলে উপ-পোস্ট মাস্টার জেনারেল (রাঙামাটি অঞ্চল) মো. তৈয়ব আলী বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই, এমনটিতো হওয়ার কথা নয়। তারপরও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। 

স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্টরা প্রধান ডাকঘরটি এখান থেকে সরিয়ে স্বল্প পরিসর করার পায়তারা করছে বলা শোনা যায়। নিজেদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি চেপে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে এখানে নতুন করে গ্রাহক নেই, অথচ প্রতিনিয়ত অ্যাকাউন্ট করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন লোকজন। 

রামগড় প্রেসক্লাব সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন বলেন, এ ধরনের খবর আমিও শুনেছি। সমস্যা সমাধানে ডাকবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তরিক উদ্যোগ দরকার। পুরোদমে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দেখতে চায় এলাকাবাসী। 

এদিকে, রামগড় প্রধান ডাকঘরটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল ও আসবাব সামগ্রীর মারাত্মক অভাব এখানে। ভবনের বিভিন্ন অংশে বড় ধরনের ফাটল ও প্রতিনিয়ত পলেস্তারা খসেপড়ার পাশাপাশি ভেতরে বৃষ্টির পানি চুইয়ে ঢোকায় পুরো ভবনটিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। 

পোস্ট মাস্টার শহীদ কামাল আজাদ বলেন, বিপদের আশঙ্কার মধ্যেই এখানে দাপ্তরিক কাজকর্ম সারতে হচ্ছে। এ দূরাবস্থার চিত্র সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে,  দ্বিতীয় তলায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় নীচতলার একটি রুমে থাকেন পোস্ট মাস্টার শহীদ কামাল আজাদ। ওপর তলায় ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা-জানালা সব ভাঙা। প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দের অভাবে জেনারেটর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বসানো চিঠির বাক্স (লেটার বক্স) পুরোনো জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন চিঠির বাক্স স্থাপন অত্যন্ত জরুরী। 

অন্যদিকে, প্রচণ্ড জনবল সঙ্কটে পড়েছে রামগড় প্রধান ডাকঘরটি। এর অধীনে রয়েছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, মানিকছড়ি, গুইমারা, লক্ষ্মীছড়ি ও রামগড় উপজেলা ডাকঘর এবং নাকাপা ও কলাবাড়ি শাখা কার্যালয় (সাবেক মহকুমা রামগড়)। এ ছাড়া ফটিকছড়ির বাগান বাজার, চিকনছড়া, নলুয়া চা বাগান শাখা কার্যালয়গুলোও রামগড় প্রধান ডাকঘরের নিয়ন্ত্রণাধীন। অথচ এখানে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনশক্তি নেই। যে কারণে এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সঠিক দেখভাল করা যাচ্ছে না। 

পোস্ট মাস্টার জানান, সটিং অপারেটরের দুটি পদ শূন্য, দুই জন অফিস করণিকের একজনও নেই, শহর পরিদর্শকের একটি পদ খালি, সহকারী পরিদর্শকের দুটি পদই শূন্য এবং পোস্টম্যান নেই একজন। পোস্টম্যান মো. দিদার হোসেন লোকবল সঙ্কটের কারণে তাকেই অফিসিয়াল কাজকর্ম দেখতে হয়। 

তিনি বলেন, একটি সাইকেল হলে চিঠিপত্র বিলি করতে সুবিধা হতো। এ রকম অবস্থায় ধুকে ধুকে চলছে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি। 

সরেজমিন জানা যায়, ডাকঘরের মালিকানাধীন ৫০ শতাংশ জমির পশ্চিমপাশের পুরো সীমানা প্রাচীর (১৫০ ফুটের মত) ধসে পড়ায় মেরামত করা হয়েছে। নতুন করে সামনের প্রাচীর (উত্তর পাশ) ধসে পড়েছে কিন্তু এটি মেরামতের কোন উদ্যোগ অদ্যাবধি নেওয়া হয়নি। ফলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় পড়েছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। সহজেই ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে বাইরের যে কেউ। অপর দুই পাশের সীমানাপ্রাচীরও নড়বড়ে, ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সামনের কাউন্টারের কাঠের আসবাব সামগ্রী অনেক পুরোনো-নষ্ট হয়ে গেছে। নড়বড়ে কর্মচারী ক্লাবটি মেরামত জরুরি। বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে যায়।
 
 এ প্রসঙ্গে উপ-পোস্ট মাস্টার জেনারেল (রাঙ্গামাটি অঞ্চল) মো. তৈয়ব আলী জানান, দেশের সবকটি ডাকঘরই মারাত্মক লোকবলের সঙ্কটে ভুগছে, বলা যায় এ সমস্যা দেশব্যাপী। ভবন ও প্রাচীর মেরামতের বিষয়ে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এআই