বৃহস্পতিবার ০৮ জুন ২০২৩

| ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৮:৩৪, ১৬ নভেম্বর ২০২২

শ্যামল রুদ্র, রামগড়

রামগড়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব, যেন দেখার কেউ নেই!

প্রকাশের সময়: ১৮:৩৪, ১৬ নভেম্বর ২০২২

শ্যামল রুদ্র, রামগড়

রামগড়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব, যেন দেখার কেউ নেই!

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আইন অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এলাকার প্রভাবশালীরা নদী-ছড়া, খাল-বিল ও কৃষিজ জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এলাকাবাসী।

রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারি ইজারাবিহীন বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 

এদিকে,  উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রসঙ্গটি প্রায়ই উঠে। বক্তারা এ অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানান। যত্রতত্র বালু উত্তোলন কীভাবে সামগ্রিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে তা বৈঠকে তুলে ধরা হয়। 

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) রামগড় উপজেলা কমিটির সভাপতি মো.শাহ আলম বলেন, বিষয়টি বৈঠকে কয়েকবার তুলে ধরেছি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার ইফতিয়ার উদ্দিন আরাফাতের বরাত দিয়ে তিনি জানান, রামগড়ে ৪টি বৈধ বালুমহাল আছে। এর বাইরেরগুলো ইজারাবিহীন ও অবৈধ। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসন মাঝে মধ্যে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

জানা যায়, তৈচালা, সোনাইছড়ি খাল, পিলাক নদীর অন্তুপাড়া ও বৈদ্যপাড়া বালু উত্তোলনের জন্য ইজারাভুক্ত। এর বাইরে আরও অর্ধশতাধিক অবৈধ ঘাট রয়েছে যেখান থেকে প্রতিনিয়ত বালু উঠানো হয়। খাগড়াবিল ও নতুনপাড়া সড়কটি বালুভর্তি ট্রাকের দাপটে ক্ষতবিক্ষত। এলাকায় জনভোগান্তির আরেক নাম এখন বালুবাহিত ট্রাক। এখানে বেশকয়েকটি অবৈধ বালুমহাল আছে। 

সরেজমিনে রুপাইছড়ি তাঁরাচান পাড়া, নোয়াপাড়া,  নব্বই একর, লালছড়ি,লামকুপাড়া বাগানটিলা,দক্ষিণ লামকু পাড়া গেলে দেখা যায়, বালু উত্তোলন করায় ধানি জমিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, কালভার্ট নষ্ট হচ্ছে ও রাস্তাঘাট ক্রমেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। খাগড়াবিল ও নতুনপাড়া সড়কে প্রতিরাতে ২৫-৩০টি বালুভর্তি ট্রাক বাইরে পাচার হয়। 

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, উন্মুক্ত স্থান, ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটারের মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিং করা যাবে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী বলেন, বালু খেকোরা রাস্তাঘাট, ধানিজমি, কালভার্ট ধংস করছে। কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। 

সূত্র জানান, এখানে বাচ্চু কোম্পানীর ছেলে মোস্তফা, আবু ও রানাসহ অনেকেই জড়িত। মফিজ মেম্বারের বাড়ির পাশে ২টি, লালছড়িতে ৬টি, উত্তর লামকুপাড়ায় ২টি অবৈধ বালুমহাল রয়েছে। পাতাছড়া ইউনিয়নের যৌথখামার হয়ে বাজার চৌধুরী ঘাটে ৫-৭টি অবৈধ বালুমহাল আছে। এই জায়গাটা বেশ দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের খুব একটা নজরদারি নেই। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নুরুল আবছার এ বিষয়ে অবগত নন উল্লেখ করে বলেন, এগুলো বন্ধ করা স্থানীয় প্রশাসনের কাজ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারেন।

গত ৩১ আগস্ট পাতাছড়া ইউনিয়নের ধামাইপাড়ার হাসান রাজা ঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বিপুলপরিমাণ বালু ও বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি জব্দ করেন। জানা গেছে,  স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আবদুল লতিফ ইজারাবিহীন এই ঘাট থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। 

জানতে চাইলে আবদুল লতিফ বলেন, আমার মতো চুনোপুঁটি ধরে বন্ধ করা যাবে না, এর সাথে এলাকার রাঘব বোয়ালরা জড়িত। পিলাক খালে অন্তত ১৫-২০ টি অবৈধ বালুমহাল আছে। প্রভাবশালীরা এখানে অবৈধ ব্যবসা করছে।  

এর আগে ৯ আগস্ট রামগড় ইউনিয়নের লামকু পাড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় মুজিবুর রহমান সুমন নামে এক ব্যক্তিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এখানে শাহজাহান মেম্বারও অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িত। সরকার দলীয় লোক হিসাবে ওপরের মহলে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে।  

জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি নানা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কম পয়সায় এখান থেকে বালু দেওয়া হয়। তাই বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হয়। 

রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, ব্যক্তির দায় দল নেবে না। অবৈধ কাজে বিরত থাকতে দলীয়ভাবে সবসময় বলা হয়। তারপরও কেউ বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ সমর্থন বা সহযোগিতা দেবে না।

সরেজমিন রামগড়ের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে জানা যায়, ড্রেজার মেশিন ও বালু পরিবহনে ব্যবহৃত ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টরের বিকট শব্দে এলাকাবাসী  অতিষ্ঠ। যত্রতত্র বালু উত্তোলন জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। রাত-দিন সবসময় চলে এই অবৈধ বালু পাচারের উৎসব। ফলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, সেতু-কার্লভাট, নষ্ট হয়ে ক্রমান্বয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে ধুলোবালির স্তুপ আবাসিক এলাকার বায়ুদূষণসহ সার্বিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

এ প্রসঙ্গে রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, আমার জানা মতে রামগড়ে ৪টি বৈধ বালুমহাল রয়েছে। অন্য সবকটি ইজারা বহির্ভূত। যত্রতত্র বালু উত্তোলন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধংস করছে। ইজারাবিহীন বালুমহাল বন্ধ করা প্রশাসনের দায়িত্ব।

জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানস চন্দ্র দাস বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনা নজরে এলে বা অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

এআই