
ছয় বছর কর্মরত ছিলেন কক্সবাজার জেলার বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে। তৃতীয় শ্রেণির এ কর্মচারীর মূল বেতন প্রায় দশ হাজার টাকা। তবে সর্বসাকুল্যে বেতন-ভাতা পেতেন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। অথচ এই কর্মচারীর একাউন্টেই লেনদেন হয়েছে দুই কোটি টাকারও বেশি অর্থ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে মিলেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতোমধ্যে এ কর্মচারীর একাউন্টে থাকা প্রায় দেড় কোটি টাকা অবরুদ্ধকরণের (ক্রোক) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে ৩য় শ্রেণির কর্মচারীর একাউন্টে কোটি টাকার উৎস নিয়ে খোদ বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যদিও আরিফ দাবি করেন, ‘এসব অর্থ তার পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্যের।’ তবে দুদকের পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, আরিফুল ইসলামের একাউন্টে থাকা এসব অর্থ ছিল ‘ঘুষের টাকা’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরিফুল ইসলাম টিপু বর্তমানে নোয়াখালী জেলার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয়ে একই পদে কর্মরত আছেন। তিনি কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার এসএম পাড়ার ফজলুল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ হোসাইন এ অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন সন্দেহজনক হওয়ায় স্থিতি থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয় দুদক। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সিনিয়র দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরিফুল ইসলামের একাউন্টে থাকা ১ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৭ টাকা অবরুদ্ধকরণের নির্দেশ দেন। গত ২৫ মে এ নির্দেশনা দিলেও ২৮ মে আদালতের নির্দেশনার চিঠিটি পৌঁছায় ব্যাংক ও দুদকের কাছে।
দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে টাকাগুলো জব্দ করা হয়েছে। আরিফুলের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।’
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় কক্সবাজার বিআরটিএ কার্যালয়টিতে দীর্ঘ সময় ধরে নিজস্ব বলয় তৈরি করে ‘ঘুষ’ বাণিজ্য চালিয়ে আসছিলেন আরিফুল ইসলাম। নির্দিষ্ট দালালের মাধ্যমে ব্যাংকে ঘুষের অর্থ সংগ্রহ করতেন তিনি। পরবর্তীতে পদ ভেদে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ঘুষের টাকা বন্টন করতেন আরিফ। গেল বছর বিষয়টি প্রকাশ হলে ‘দায় সারতে’ আরিফুল ইসলামকে নোয়াখালী কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাকে হয়রানি করার জন্য একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই এমন কাণ্ড চালিয়ে আসছে। আর একাউন্টে যে অর্থ রয়েছে, তা আমার নয়। সবগুলোই আমার পারিবারিক ব্যবসার টাকা। কোন অবৈধ অর্থ তাতে নেই।’
এসএ