সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

শেষ হচ্ছে অপেক্ষা/ চলতি বছরে ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাত্রা

প্রকাশের সময়: ১১:১৪, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ হচ্ছে অপেক্ষা/ চলতি বছরে ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাত্রা

ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাত্রা, আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব হতে চলেছে। চলতি বছরে ট্রেন যাত্রা শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার আর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী দিয়ে এই রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে  প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

দেশের অন্যান্য জায়গার রেলপথ থেকে এই রেলপথের বৈশিষ্ট্য আলদা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার আর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী দিয়ে এই রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের কাজের প্রায় ৮৫ শতাংশই শেষ। ঝিনুক আকৃতির দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশনের কাজও শেষ পর্যায়ে। এছাড়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু মেরামত করে চালানো হবে ট্রেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায় নির্মাণাধীন স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশাল কর্মযজ্ঞ, স্টেশন ভবনের এক পাশে ঝিনুকের স্টিলের কাজ শেষ। ছয়তলা স্টেশন ভবনের মূল কাঠামোর কাজ শেষ। এ স্টেশনটিতে পর্যটকেরা লাগেজ স্টেশনে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে। এছাড়া ভবনটিতে থাকবে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনাকক্ষ, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা,পেসেঞ্জার লাউঞ্জ,  শপিং মল, রেস্তোরাঁ, তারকামানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়।

সমুদ্রসৈকত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ২৯ একর জমির ওপর সামুদ্রিক ঝিনুকের আদলে নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন। ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কক্সবাজারের আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের সম্পূর্ণ ফ্লোর এরিয়া ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫ বর্গফুট। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণের পর পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন ৪৬ হাজার যাত্রী কক্সবাজারে যাতায়াত করতে পারবেন।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আব্দুল জাবের মিলন জানান, তিন মাসের মধ্যেই মূল ভবন ও আশপাশের কাজ শেষ হবে আশা করছি।

রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষের পথে

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথের প্রথম ধাপের নির্মাণকাজ চলছে। এই রেলপথে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ মোট নয়টি স্টেশন হচ্ছে। অন্য স্টেশনগুলো হলো দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু।

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, পুরো প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ। কালুরঘাট সেতুতে ৩০-৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। বাকিটা ৮০ কিলোমিটার গতিতেই চলবে। এখন তো ট্রেন চলছে, তবে কক্সবাজার আসার ট্রেনগুলো বড় হবে। ভার নেওয়ার জন্য সেতুকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। 

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালে প্রকল্প নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে।

পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।
চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) এই প্রকল্পে কাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

কালুরঘাট সেতু মেরামত করে চলবে ট্রেন

কালুরঘাট সেতুটি মেরামত উপযোগী করে তোলার জন্য বুয়েটকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে। শত বছরের পুরনো সেতুটি মেরামত করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানো যাবে কিনা সমীক্ষা চালানোর জন্য বুয়েটের সাথে রেলওয়ের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল মাঠ পর্যায়ে প্রায় দেড় মাসের মতো কাজ করেছে। ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক সমীক্ষার একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। শীঘ্রই চূড়ান্ত সমীক্ষা রিপোর্ট জমা দেবে। এরপর রেল কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করবে।

রেলওয়ের সেতু প্রকৌশলী দপ্তর থেকে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে আগামী ৫–৬ বছর (নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত) কক্সবাজার রুটের ট্রেন চলানোর জন্য বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের দেয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 
রেলমন্ত্রী চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ড মাঠে রেলওয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলবে। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলার জন্য বিদ্যমান কালুরঘাট সেতুটি মেরামত করতে হবে।

কেডি

সম্পর্কিত বিষয়: