
বান্দরবানের লামা উপজেলায় রাতের আধারে ম্রো জাতিগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েং পাড়ায় সরেজমিনে ঘটনার তদন্ত করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নেন।
কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সদস্য কংজরী চৌধুরির নেতৃত্বে পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম, উপপরিচালক, মোহাম্মদ গাজী সালাউদ্দিন এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ঘটনাস্থল সরেজমিনে তদন্ত করেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এসময় কংজরী চৌধুরী বলেন, ‘কমিশন সরকারকে সুপারিশ করতে পারে মাত্র। বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।’
তিনি আরও বলেন, রাতের আধারে ম্রো পাড়ায় হামলা ভাংচুর কারা করেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা তা স্থানীয় প্রশাসন তাদের আশ্বস্থ করেছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়াসহ কয়েকটি ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের চিত্র আমরা দেখেছি।
রেংয়েং ম্রো পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত রোববার রাতে পাড়ায় বেশ কয়েকটি বসতঘর পুড়িয়ে এবং ভাংচুর করে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানির লোকজন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে কোম্পানির স্থানীয় ম্যানেজার মো. আরিফ বলেন, রাবার বাগানের লিজ নেওয়া জায়গায় ম্রোরা জোরপূর্বক মাচাং ঘর তৈরি করে এবং সেখানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আমাদের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছে। আমরা কোম্পানি কোনোভাবেই এই ধরনের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত না।’
স্থানীয়রা জানান, রেংয়েং ম্রো পাড়ায় মূলত গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। রেংয়েং ম্রো পাড়ায় ৩৬টি পরিবার বসবাস করে। ওই সময় ৪০০ একর বাগানে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছিল। এবার আগুনে পুড়া পরিবারগুলো অতিরিক্ত ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে দিনযাপন করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত রেংওয়াই ম্রো বলেন, পাড়ার কারবারিসহ কয়েকজন মিলে ঠান্ডার কারণে আগুন পোহাচ্ছিলাম। রাবার কোস্পানির লোকজন এসে প্রথমে আমার ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কারবারিসহ আমরা দুজন লাফ দিয়ে ঝিঁরিতে লুকিয়ে ছিলাম। আমার দুই ছেলে, দুই মেয়ে অন্যদিকে পালিয়ে যায়। সকালে এসে দেখি, আমার ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমনকি তিনটা বাচ্চাসহ একটি মা ছাগল ছিল। তারা মা ছাগলটাকেও ধরে নিয়ে যায়।
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস বলেন, বিষয়টি সমাধানে তাদের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হলেও সেখান থেকে ম্রো চলে আসায় সমাধান হয়নি। তবে বিরোধকৃত স্থানে প্রথমে রাবার কোম্পানির বাগান করেছিল বলে দাবি করেন তিনি।
এসএ