সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩

| ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১০:৫৩, ১৮ আগস্ট ২০২২

জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা

জনমানবহীন পারকি সমুদ্র সৈকত, হারিয়ে যাচ্ছে ঝাউবন

প্রকাশের সময়: ১০:৫৩, ১৮ আগস্ট ২০২২

জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা

জনমানবহীন পারকি সমুদ্র সৈকত, হারিয়ে যাচ্ছে ঝাউবন

তুমুল বেগে বইছে হাওয়া, উত্তাল সমুদ্র, তীরে একের পর এক আঁচড়ে পড়ছে সাগরের ঢেউ। নেই মানুষের কোলাহল, শুধুই শোনা যাচ্ছে সৈকতের গর্জন। সাগরের রীতিনীতিতে তেমন একটা পরিবর্তন দেখা না গেলেও পারকি সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশে এসেছে ভয়ংকর পরিবর্তন। সমুদ্রের তীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ঝাউগাছগুলো এখন আর দেখা যায় না। পর্যটকদের পদচারণায় হৈ-হুল্লোড়ের দৃশ্যটাও চোখে পড়ে না। যা আছে তাও বিলুপ্তির মুখে। 

সরেজমিনে পারকি সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা যায়, শুক্র কিংবা শনি, পুরো সপ্তাহ জুড়ে যেখানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকতো সেখানে ১০/১২ জন যুবক-যুবতী ছাড়া কোনো পর্যটকের দেখা নেই। পর্যটক না থাকায় ফটোগ্রাফারদেরকে দলবেধে সৈকতের তীরে আড্ডা দিতে দেখা যায়। নারী-পুরুষের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে বিশ্রামাগার নামের কটেজগুলো প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও সেসব ধ্বংসাবশেষ এখনও একই স্থানে রয়ে যাওয়ায় সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে সৈকতের। এছাড়া যে ঝাউ গাছগুলোকে কেন্দ্র করে সৈকতের সৃষ্টি সেগুলোর অস্তিত্বও বিলীনের পথে। শেকড় থেকে মাটি সরে বেশিরভাগ ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। 

সৈকতের দক্ষিণ পাশে গাছের সাথে ঘোড়া বেঁধে বিশ্রাম করতে দেখা যায় ঘোড়াওয়ালা কামরুল। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ঘোড়ার নাম মধু। আমি আমি ঘোড়ায় করে পর্যটকদের সৈকতে ঘুরিয়ে উপার্জন করি। এখানে আমার মতো অনেকেই আছে। ঈদ মৌসুমে কিছু ইনকাম হলেও এখন সারাদিনে ২০০ টাকার বেশি আয় হয় না। পর্যটক নেই তাই গাছের ওপর শুয়ে আছি। 

পর্যটকের অপেক্ষায় ঘোড়াওয়ালা

রায়হান খান রায়ান নামের এক ফটোগ্রাফার বলেন, আমি কক্সবাজার সৈকতে ছবি তোলার কাজ করতাম। কয়েকমাস হলো এখানে এসেছি। কিন্তু এখানে তেমন পর্যটকও নেই ইনকামও নেই। ভাবতেছি আবারও কক্সবাজার চলে যাবো। 

স্থানীয় ফরিদ নামের এক যুবক জানান, পারকির ঝাউগাছগুলোর কারণে ছোটো বেলা থেকে শুনতাম এটাকে ঝাউবাগান বলা হতো। কিন্তু বিগত কয়েকবছর ধরে বন্যা, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়, বালি উত্তোলন, ক্রিস্টল গোল্ড জাহাজের অবস্থান সব মিলিয়ে পারকির প্রাকৃতিক পরিবেশটা দিনকে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ঝাউগাছগুলো এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পারকি সৈকত পরিচালনা কমিটির সদস্য এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, এ বিষয়ে উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় অনেকবার আলোচনা করেছি। বন বিভাগের কাছেও অনেকবার চিঠি দিয়েছি তবে কোনো সাড়া পাইনি। এখানে নামকাওয়াস্তে বন প্রহরী নিয়োগ থাকলেও তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে না। ফলে রাতের বেলায় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। আর পারকিতে নতুন করে বনায়ন করা না হলে এটা টিকিয়ে রাখা যাবে না। 

পারকি সৈকত পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি বন বিভাগে অবহিত করব। কীভাবে এই ঝাউগাছগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। 

হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র সৈকতের ঝাউবন

বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির (বাপউস) সভাপতি এ কে এম আবু ইউছুফ বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা পর্যটন এলাকাগুলো আমাদের সম্পদ। এর ব্যবহারে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে। কোনোভাবে যাতে পরিবেশ দূষণ না হয় সে ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় পরিবেশ দূষণের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। ফলে উপকূলীয় এলাকার আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান বিষয়টি প্রাকৃতিক কারণে হচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ঝাউগাছের শিকড় থেকে বালি সরে গেলে গাছ উপড়ে পড়ে যায়। মূলত এটা প্রাকৃতিক কারণে হচ্ছে। তাই সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান। 

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। জেলা বা উপজেলা প্রশাসন সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।

এআই