সোমবার ০৫ জুন ২০২৩

| ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

KSRM
মহানগর নিউজ :: Mohanagar News

প্রকাশের সময়:
১৬:২৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আকিব শিকদার

রক্তস্পর্শপ্রাপ্ত ভাষা আর বর্ণমালা

প্রকাশের সময়: ১৬:২৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আকিব শিকদার

রক্তস্পর্শপ্রাপ্ত ভাষা আর বর্ণমালা

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই এ বিখ্যাত গানটি মনে পড়ে। মনে পড়ে সালাম, রফিক, শফিক, জব্বারসহ আরো অনেক ভাষা শহীদদের নাম। যাদের রক্তে রাঙালো ঢাকার রাজপথ, ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় সূচিত হয়েছিলো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেদিন যাদের সাহসী পদক্ষেপ এনে দিয়েছে আমাদের মায়ের ভাষা, দেখিয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন তাদেরই কয়েক জনকে নিয়ে আজকের এই আয়োজন।


অজিত কুমার গুহ

অজিত কুমার গুহ ১৯১৪ সালের ১৫ এপ্রিল (১ বৈশাখ, ১৩২১ বাংলা) সুপারী বাগানে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা নৃপেন্দ্র মোহন গুহ ও পিতামহ মনীন্দ্র মোহন গুহ। ১৯৪৯ সালে সরকারের রোষানলে পতিত হয়ে প্রথমবারের মত কারাবরণ করেন তিনি । ভাষা আন্দোলনের একজন বলিষ্ঠ সংগঠক অজিত কুমার গুহ ১৯৫২ সালে আবার গ্রেফতার হন। প্রগতিশীল ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর তিনি ছিলেন প্রেরণা দাতা। 

একজন লেখক হিসেবে তিনি সর্বমহলে সমধিক পরিচিত ছিলেন। পত্র-পত্রিকায় তিনি নিয়মিত নিবন্ধ লিখতেন। সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য অধ্যাপক অজিত কুমার গুহকে ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘ভাষা সৈনিক সম্মাননা পদক’ ও ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমুদ্দীন মজলিস ‘মাতৃভাষা পদক-২০০৪’ প্রদান করে। ১৯৬৯ সালের ১২ নভেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। 

 

অধ্যাপক আবদুল গফুর

দেশপ্রেমিক এ ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর এর জন্ম রাজবাড়ী জেলায় পাংশা থানার দাদপুর গ্রামে । ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ সালে। পিতা হাজী হাবিল উদ্দিন। তিনি ১৯৪৫ সালে ফরিদপুর মইজুদ্দিন হাই মাদ্রাসা হতে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে কবি নজরুল কলেজ) হতে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ পাস করেন। কর্মজীবন শুরু অধ্যাপনা দিয়ে। ১৯৬৩-১৯৭০ পর্যন্ত ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

পরবরর্তিতে তিনি দৈনিক সৈনিক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৮৬ সাল হতে অধ্যাপক আবদুল গফুর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন । আবদুল গফুর ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত হন। তার বিখ্যাত কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলো-বাংলাদেশ আমার স্বাধীনতা, আমার কালের কথা, স্বাধীনতার গল্প শোন ও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম।

 

আব্দুল লতিফ

প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, ভাষা সৈনিক ও গীতিকার আব্দুল লতিফ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি লিখেছিলেন-‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়...।’ তার রচিত ও গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে- ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/কারও দানে পাওয়া নয়’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যেসব গান লিখেছিলেন তার মধ্যে ‘আমার দেশের মতো, এমন দেশ কি কোথাও আছে’ গানটি তো খুবই জনপ্রিয়।

 

তার এই অবদানের জন্য তিনি একুশের পদক, স্বাধীনতা, পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমি পদক,  সিধু স্মৃতি পদক লাভ করেন। সঙ্গীতবিষয়ক তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন আব্দুল লতিফ। ‘দেশের গান ভাষার গান’ (বাংলা একাডেমি), ‘দিলরবাব’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এবং ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’ (বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদ) থেকে প্রকাশিত হয়।  আব্দুল লতিফ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ মৃত্যুবরণ করেন।

 

অধ্যাপক হালিমা খাতুন

অধ্যাপক হালিমা খাতুন। ১৯৩৩ সালের ২৫ আগস্ট বাগেরহাট জেলার বাদেকাড়াপাড়া গ্রামে তার জন্ম। বাবা মৌলবী আবদুর রহিম শেখ এবং মা দৌলতুন নেসা। কলেজ জীবনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশজুড়ে ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা জানতে পারেন। তখনই সিদ্ধান্ত নেন ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হবেন। ২১ বছর বয়সে ১৯৫১ সালে হালিমা খাতুন ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৫২’র সেই রক্তাক্ত দিনে তিনি আমতলায় সমবেত হন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রথম বের হয় মেয়েদের দল। 

তিনি বাংলাদেশের অন্যতম একজন শিশু সাহিত্যিক। ভাষা আন্দোলনে তার সাহসী ভূমিকা এবং সাহিত্যে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক ভাষা সৈনিক সম্মাননা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সময় নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ।


আবু নছর মোহাম্মদ গাজীউল হক

আবু নছর মোহাম্মদ গাজীউল হক (১৩ ফেব্রæয়ারি ১৯২৯ - ১৭ জুন ২০০৯) হলেন একজন সাহিত্যিক, গীতিকার এবং ভাষাসৈনিক যিনি ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেনসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে গাজীউল হক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন সরকার ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের অন্যতম ছিলেন গাজীউল হক। গাজীউল হকের ‘ভুলব না ভুলব না ভুলব না এই একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’ গানটি গেয়ে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত প্রভাতফেরি করা হতো। তিনি রাষ্ট্রভাষা পদক ও সম্মাননা স্মারক, শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।
 

এআই